ভূমির শ্রেণি জটিলতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর

ভূমির শ্রেণি জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে পারে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর। শ্রেণি নির্ধারণে ভূমি মন্ত্রনালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি মাঠ পর্যায়ে চিংড়ি চাষের প্রমাণ পেয়েছে। আজ বুধবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব অধিগ্রহন-২ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের টিম মাতারবাড়ি এলাকা পরিদর্শন করে চিংড়ি চাষ দেখতে পেয়েছে। বছরের এসময়ে চিংড়ি এবং বাকি সময়ে লবণ চাষ হয়ে থাকে এসব জমিতে। কিন্তু জেলা প্রশাসনের অধিগ্রহনকৃত চূড়ান্ত তালিকায় এসব ভূমির শ্রেণি নাল (পতিত) হিসেবে দেখানো হয়েছিল। এতে ভূমি মালিকরা ভূমি মন্ত্রীর দ্বারস্থ হলে মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি করে দেয়া হয় শ্রেণি নির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনার জন্য।
তদন্ত কমিটির সদস্যগন স্থানীয় অধিবাসীদের স্বাক্ষ্য গ্রহন করেন এবং সরেজমিনে ভূমির শ্রেণি দেখেন। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি সহকারী ম্যানেজার (এস্টেট) শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমরা অধিগ্রহণকৃত জমিগুলো ঘুরে দেখেছি। একইসাথে জমির মালিকদের সাথেও কথা বলেছি। এ সময় চিংড়ি চাষ দেখতে পেয়েছি। চিংড়ি চাষের পর এসব জমিতে লবণ চাষ হবে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।’
তবে জেলা প্রশাসনের অধিগ্রহণকৃত তালিকায় এসব জমি নাল শ্রেনি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এখন শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আজ (বুধবার) সরেজমিন দেখলাম। পরবর্তীতে কমিটির সদস্যরা মিলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি মাঠ পর্যায়ে চিংড়ি চাষ দেখে গেছে উল্লেখ করে স্থানীয় ধলঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল ভূমির শ্রেণি লবণ মাঠ বা চিংড়ি ক্ষেত হিসেবে বিবেচনায় আনার জন্য। কিন্তু জেলা প্রশাসন তা নাল জমি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করায় জমির মূল্য কম নির্ধারণ হয়েছে। এতে ভূমি মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন লবণ বা চিংড়ি জমি হিসেবে রেকর্ডভুক্ত করতে আমরা দাবি জানিয়েছি।’
মাতারবাড়ি বন্দরের জন্য প্রথম দফায় ২৮৩ দশমিক ২৩ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য চূড়ান্ত হয় গত মে মাসে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অধিগ্রহণবাবদ ৭৫ কোটি ১১ লাখ ৫৯ হাজার ২৭৫ টাকা চেয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে সমুদয় টাকা জমা দিয়েছেন বলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আল আমিন পারভেজ নিশ্চিত করেছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অধিগ্রহণকৃত ২৮৩ দশমিক ২৩ একর জমির মধ্যে ২৭৮ দশমিক ৫৫ একর ভূমি নাল জমি। বাকি জমিগুলো বাড়ি, পুকুর, পুকুর পাড় ও রাস্তা হিসেবে রয়েছে। সরকারের অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী রেকর্ডে ভূমির শ্রেণি যাহাই থাকুক না কেন অধিগ্রহণের পূর্বে মাঠ পর্যায়ের তদন্তে যা পাওয়া যাবে ভূমির মূল্য সেভাবেই নির্ধারণ হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নেয় সরকার। জাইকার অর্থায়নে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে মাতারবাড়ি পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৬ মিটার ড্রাফট (গভীরতা) এবং ২৫০ মিটার চওড়া চ্যানেল নির্মাণ হয় বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায়। ইতিমধ্যে ১৪ মিটার ড্রাফট করাও হয়েছে আগামীতে ‘মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ এর আওতায় ড্রাফট ১৬ মিটারে উন্নীত করা হবে। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মিত এই প্রকল্পের বাজেট ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (নিজস্ব তহবিল) ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।