বিদেশি পতাকাবাহি জাহাজে পণ্য পরিবহনে ‘ওয়েভার সনদ’ পদ্ধতি বাতিল চায় শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। বাংলাদেশ ফ্ল্যাগ ভেসেলস (প্রটেকশন অব ইন্টারেস্ট) আইন ২০১৯ অনুযায়ী বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ছাড়া সমুদ্রগামী বিদেশি কোনো জাহাজে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে হলে কমপক্ষে ১৫ দিন আগে ওয়েভার সনদেে আবেদন করতে হয়। এই পদ্ধতিতে জটিলতা তৈরী হবে মনে করছে শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশন।
মন্ত্রনালয়ে পাঠানো এক লিখিত চিঠিতে অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলছেন, উপমহাদেশ এবং আশপাশের দেশগুলোর বন্দর ও বাংলাদেশের বন্দরের মধ্যে জাহাজ আসা-যাওয়া ৪-৫ দিনের বেশি হয় না। এক্ষেত্রে ১৫ দিন আগে ওয়েভার সার্টিফিকেটের আবেদন করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে প্রাইভেট আইসিডিগুলোতে (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) যেখানে শতভাগ রপ্তানি পণ্য স্টাফিং হয়, সেখানে এত দীর্ঘ সময় পণ্য ফেলে রাখা যায় না। তাছাড়া ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে রপ্তানি পণ্যের মাদার ভেসেল ধরতেও সমস্যা হয়। তাই আইনের সংশ্লিষ্ট উপধারা সংশোধন করে ওয়েভার আবেদনের সময় পাঁচ দিন করা উচিত।
নতুন আইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে সমুদ্রপথে পরিবাহিত পণ্যের অন্যূন ৫০ শতাংশ বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজে পরিবহণ করতে হবে। তবে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ অথবা সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য অংশীদার দেশের পতাকাবাহী জাহাজ পাওয়া না গেলে এবং বাংলাদেশের অথবা উক্ত দেশের পতাকাবাহী জাহাজ দ্বারা কোনো কারণে পণ্য পরিবহণ করা সম্ভব না হলে অনুমতি সাপেক্ষে অন্য কোনো দেশের পতাকাবাহী জাহাজে পণ্য পরিবহণ করা যাবে। এক্ষেত্রে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিতে হবে ওয়েভার সনদ। বর্তমানে নৌ বানিজ্য দপ্তর থেকে এই সার্টিফিকেট নিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘বাংলাদেশি জাহাজের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য অবশ্যই আইনের প্রয়োজন রয়েছে। সেদিক থেকে ফ্ল্যাগ ভেসেল অ্যাক্ট ঠিক আছে। কিন্তু এই স্বার্থ সংরক্ষণ করতে গিয়ে স্বাভাবিক আমদানি-রপ্তানিতে যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেদিকটাও দেখতে হবে। আমাদের দেশের পতাকাবাহী কনটেইনার জাহাজ রয়েছে ৫-৬টি। অথচ চট্টগ্রাম বন্দর ও ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোর মধ্যে ৬০-৭০টি কনটেইনার জাহাজ সারা বছরই চলাচল করে। এদিক থেকে হিসাব করলে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজের সংকট রয়েছে। তাই বিদেশি জাহাজেও পণ্য পরিবহণ করতে হয়। এক্ষেত্রে জাহাজ বন্দরে বার্থিং নেওয়ার ১৫ দিন আগে মার্কেন্টাইল মেরিন অফিস থেকে ওয়েভার সার্টিফিকেট নিতে হয়। অর্থাৎ ১৫ দিন পর্যন্ত পণ্য নির্ধারিত জাহাজের জন্য সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।
যেহেতু আইন হয়ে গেছে, তাই বর্তমান নিয়ম অনুযায়ীই পণ্য পরিবহন হচ্ছে।
নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ জানান, ফ্ল্যাগ ভেসেল প্রটেকশন অ্যাক্ট অনুযায়ী জাহাজ লোডিং পোর্টে যাওয়ার ১৫ দিন আগে ওয়েভারের আবেদন করতে হবে। আমাদের শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন এই ১৫ দিন সময় মেনটেইন করতে পারছে না। যেহেতু বেশির ভাগ পণ্য আসে ভারত, থাইল্যান্ড, কলম্বো, মালয়েশিয়া হয়ে। এসব বন্দর থেকে দুই-তিন দিনে পণ্য এসে যায়। কোন জাহাজ কখন কোথায় যাবে, তা ১৫ দিন আগে আইডেন্টিফাই করা যায় না। তাই তারা সময়টা কমাতে চান। এটা তাদের যৌক্তিক দাবি। এজন্য আমরা শিপিং এজেন্টদের দাবি অনুযায়ী কেস টু কেস সময় নির্ধারণের একটা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি মন্ত্রণালয়ে।
’ওয়েভার সনদ’ বাতিল চায় শিপিং এজেন্টরা
1 February, 2023
Views