বাংলা নিউজ

৩৬০০ কোটি টাকার জমি এক টাকায় চেয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর

চট্টগ্রামে নতুন একটি বন্দর ‘বে টার্মিনাল’ নির্মানের জন্য ৩ হাজার ৬শ কোটি টাকার জমি এক টাকায় চেয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের হাতে এতবড় প্রকল্প নির্মানে বিশাল অংকের তহবিল নেই বলে নামমাত্র মূল্যে ৮০৩ একর জমি চেয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

পতেঙ্গা সাগরপার ঘিরে জেগে ওঠা এই জমির মূল্য তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করেছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। প্রথমে তারা এ টাকা পরিশোধের চিঠিও দিয়েছিল। কিন্তু বন্দরের পক্ষ থেকে এই মেগাপ্রকল্প নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চাইলে পরে জেলা প্রশাসন অবস্থান থেকে সরে এসে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অনুমতি দিলে বন্দর নির্মাণের জন্য ভূমি পেতে আর কোনো জটিলতা থাকবে না।
উল্লেখ্য, তিন ধাপে নির্মাণ পরিকল্পনায় থাকা এ মেগাপ্রকল্পের জন্য এরই মধ্যে মাস্টারপ্ল্যানের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। বে টার্মিনাল নাম দিলেও এটি মূলত বিশাল এক বন্দর হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ প্রবেশের যে সীমাবদ্ধতা আছে, বে টার্মিনালে এর কোনোটিই থাকবে না। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা জাহাজ ভিড়তে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়েও দ্বিগুণ বড় আকারের জাহাজ বে টার্মিনাল জেটিতে ভিড়তে পারবে। এখানে থাকবে তিনটি টার্মিনাল; একটি পরিচালনা করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা করবে বিশ্বের শীর্ষ বন্দর পরিচালনাকারীরা। ২০২৩ সালের শুরুতে ঠিকাদার চূড়ান্ত করে এই প্রথম টার্মিনালটি নির্মাণ শুরুর পরিকল্পনা নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। অন্যগুলো পর্যায়ক্রমে নির্মিত ও পরিচালিত হবে বিদেশি বন্দর নির্মাণকারীদের দ্বারা।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বন্দরের তহবিল থেকে আমরা এর আগে সরকারী কোষাগারে অনেক টাকা জমা দিয়েছি। এই প্রকল্প সরকারের অগ্রাধিকার; তাই সরকারের কাছ থেকেই এই অনুমতি চেয়েছি।

তিনি বলেন, ৮৭০ একর জমির মধ্যে ৬৭ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অনেক আগেই অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের টাকাও পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি ৮০৩ একর হচ্ছে খাসজমি। সেই জমি প্রতীকী মূল্যে দেওয়ার জন্য নৌ মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে। ভূমিমন্ত্রী নিজেও বিষয়টির যৌক্তিকতা অনুধাবন করেছেন। এখন প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে ফিরলে আশা করছি এর সমাধান মিলবে। ’

চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘এরই মধ্যে বে টার্মিনাল নির্মাণের জন্য স্থান চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা কনসালট্যান্ট নিয়োগ দিয়ে মাস্টারপ্ল্যানও করেছি। আশা করি, সরকারের ভূমির অনুমোদন পেলে মাস্টারপ্ল্যানও চূড়ান্ত করে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ ঠিকাদার নিয়োগ দিতে পারব। আর ২০২৩ সালে কাজ শুরু করলে ২০২৫ সালেই বে টার্মিনালের প্রথম ধাপ নির্মাণ শেষ করতে পারব। ’

জানা গেছে, পতেঙ্গা সাগরপার ঘিরে পতেঙ্গা থেকে রাসমণি ঘাট পর্যন্ত সোয়া ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৩শ একর জমিজুড়ে এই বে টার্মিনালের মেগাপ্রকল্প নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮৭০ একর জমিতে গড়ে তোলা হবে তিনটি টার্মিনাল। এরই মধ্যে ৬৭ একর জমির একটি অংশে মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে বলা আছে, বে টার্মিনালে প্রথম দফায় তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে একটি এক হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল, একটি ৮৩০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল এবং অন্যটি দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button