২০ দিনে মেরামত শেষে সচল হয়ে চট্টগ্রাম ছাড়লো ’হাইয়ান সিটি’ জাহাজ

২০ দিনে ’হাইয়ান সিটি’ নামের বিশাল কন্টেইনার জাহাজ মেরামতের অনন্য নজির স্থাপন করলো বাংলাদেশের মেরিন প্রকৌশলীরা। জাহাজের ফুটো, আকার এবং ক্ষতির দিক থেকে এতবড় জাহাজ মেরামতের নজির বাংলাদেশের ছিল না; সেটিই করে দেখালাে মেরিন প্রকৌশলীরা।
৮শ কোটি টাকার রপ্তানি পণ্য নিয়ে হাইয়ান সিটি জাহাজটি চট্টগ্রাম ছাড়লো আজ মঙ্গলবার দুপুরে। চট্টগ্রাম বন্দর জেটি থেকে ১১শ একক কন্টেইনার পণ্য নিয়ে জাহাজটি গত ১৪ এপ্রিল সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। কুতুবদিয়া পৌঁছে বাংলাদেশি আরেকটি ট্যাংকার জাহাজ ‘ওরিয়ন এক্সপ্রেস’র সাথে ধাক্কা লাগে। এতে জাহাজটির একপাশের তলা ফুটো হয়ে যা্য় এবং জাহা⁹জটির কন্টেইনার রাখার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে কাত হযে যায়। র ফুটো দিয়ে পানি ঢুকতে ঢুকতে বিপজনক অব চট্টগ্রাম বন্দ কর্তৃপক্ষ।
অনেকগুলো টাগবোট নিয়ে ঈদের সরকারী ছুটির মধ্যেই ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে জাহাজটিকে টেনে কর্ণফুলী ড্রাইডকে নেয়া হয়। এরপর থেকে সেখানে জাহাজটির মেরামত কাজ শুরু করেন প্রান্তিক-বেঙ্গল স্যালভেজ এন্ড ডাইভিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেরিন প্রকৌশলী গোলাম সারোয়ার। জাহাজটির মেরামত কাজ জটিল অবস্থায় পৌঁছলে তিনি নিজে মেরামতে যোগ দেন। নিজস্ব প্রকৌশল দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ২০ দিনে তিনি মেরামত শেষ সচল করতে সক্ষম হন।
জানতে চাইলে মেরিন প্রকৌশলী গোলাম সারোয়ার বলেন, অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজটা শুরু করি। এরমধ্য প্রধান হচ্ছে ফুটো মেরামত করা। স্টিল পাত দিয়ে ডুবুরি নিয়ে আমি নিজেই কাজটি শুরু করি; তখন সেটি ছাড়া কোন উপায় ছিল না। জাহাজটির গভীরতা ছিল সাড়ে সাত মিটার কিন্তু পানি ঢুকে যায়ায় গভীরতা ১১মিটারে উন্নীত হয়। এজন্য জেটির পাশে নদী খনন করতে হয়েছে জাহাজটিকে ভাসিয়ে রাখতে।
তিনি বলেন, জাহাজে থাকা অনেকগুলো কন্টেইনাের পানি ঢুকে গেছিল এতে কন্টেইনারের এতবেশি ওজন বেড়ে যায় ক্রেন দিয়ে তোলা সম্ভব হয়নি। ফলে সেগুলাে তুলতে বিশেষ কৌশল নিতে হয়েছে। আর জাহাজের ধাক্কায় অনেক কন্টেইনার ছিটকে এলোমেলো হয়েছে; আবার অনেকগুলো জাহাজের নীচে পড়ে গেছে। সেগুলো তুলে আনতে গলদঘর্ম হতে হয়েছে। সবমিলিয়ে আমরা কাজটি নিখুতভাবে করতে পেরেছি বলেই ক্লাস সনদ নিয়ে জাহাজটি বন্দর ছাড়তে পেরেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর জেটির পানির গভীরতা সীমাবদ্ধতা থাকায় জাহাজটিকে নেয়া হয় কর্ণফুলী নদীর দক্ষিনপাড়ে কর্ণফুলী ড্রাইডক জেটিতে। সেই জেটিতে রেখেই জাহাজটি মেরামত শেষ সচল করা হয়।
কর্ণফুলী ড্রাইডকের ব্যবস্থাপক মােহাম্মদ সোলায়মান বলেন, অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আমাদের কাজটি করতে হয়েছে। যেটা আমাদের জন্য শিক্ষনীয় হয়ে থাকবে আজীবন।
হাইয়ান সিটি জাহাজটির দেশিয় এজেন্ট হচ্ছে কন্টিনেন্টাল গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদুল আলম বলেন, এটা অবশ্যই এটি চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ এই উদ্যোগ না নিলে অনেক বড় জটিলতায় পড়তে হতো আমাদের। বন্দরের সাহসী উদ্যোগের পাশাপাশি প্রান্তিক গ্রুপের চ্যালেঞ্জ এবং কর্ণফুলী ড্রাইডকের তত্ত্বাবধান মিলে অনন্য অর্জন আমরা করতে পেরেছি।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বন্দরের শক্তিশালী টাগবোট কাণ্ডারী ১ এবং কাণ্ডারী ৬ এর সহায়তায় জাহাজটি কর্ণফুলী নদীর বন্দর চ্যানেল অতিক্রম করে। এ সময় নিয়ম অনুযায়ী জাহাজটির নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের অভিজ্ঞ পাইলট আবু সাইদ মো. কামরুল আলম। বেলা দেড়টার দিকে তিনি বহির্নোঙরে পৌঁছে জাহাজের নিজস্ব পাইলটের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, একটি বড় জাহাজ বহির্নোঙরে মারাত্মক দুর্ঘটনার পর টো করে এনে মেরামতের পর পুনরায় বিদেশ পাঠানো নিঃসন্দেহে আমাদের সক্ষমতার প্রমাণ। এ কাজে সরকারি, বেসরকারি অনেক সংস্থা, প্রতিষ্ঠান আমাদের সহযোগিতা করেছে। সবার প্রতি আমরা ধন্যবাদ জানাই। আমাদের এ সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সাফল্যে মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডে বাংলাদেশের সুনাম বাড়বে।