২০ ঘন্টার পর সচল হয়েছে শ্রীলংকার কলম্বো বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেয়ায় গত মঙ্গলবার বিকাল থেকে এই বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে। কলম্বো বন্দরের জায়া এবং ইস্ট কন্টেইনার টার্মিনালে পণ্য উঠানামা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। সেইসাথে বহির্নোঙর থেকে জেটিতে জাহাজ আনার কার্যক্রম বন্ধ থাকে। বিভিন্ন পক্ষের সাথে আলােচনার পর গতকাল বুধবার বিকাল থেকে কার্যক্রম সচল হয়।এরইমধ্য অন্তত ১৮টি জাহাজ জেটিতে প্রবেশের অপেক্ষায় সাগরে আটকা পড়ে।
কলম্বো বন্দরে বেশ কমাস ধরেই পণ্য উঠানামা কাজে অচলাবস্থা চলছিল। এই কারণে বন্দর জেটিতে ভিড়তে জাহাজকে অন্তত ৫ থেকে ৭দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। অনেক শিপিং লাইন কলম্বো বন্দর এড়িয়ে বিকল্প বন্দর ব্যবহার করছিল। সংকট কাটাতে নানা পদক্ষেপ নেয়ার পর জাহাজজট কিছুটা কমে আসছিল। এরইমধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতার ধাক্কায় আবারো অচল হলো।
কলম্বো বন্দর সচলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ কমলে স্বস্তি ফিরেনি। কারণ ২০ ঘন্টায় যে অচলাবস্থা তৈরী হয়েছে তা কাটিয়ে পুরোদমে সচল হতে আরো বেশ সময় লাগবে কলম্বোর। আর এর ধকল বাংলাদেশসহ কলম্বো বন্দর ব্যবহারকারীদের বইতে হবে।
জানতে চাইলে কলম্বো বন্দরের বড় ব্যবহারকারী শিপিং লাইন এমএসসি’র এক কর্মকর্তা বলছেন, বন্দর সচল হলে আমরা স্বস্তিতে নেই। কারণ একদিন জাহাজ সেখানকার বহির্নোঙরে বসে থাকা মানে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতি গুনতে হবে। সবাই জাহাজজটের কথা বলেন, পণ্য দ্রুত আসছে নাা তার অভিযোগ করেন। এই ক্ষতির হিসাব কেউ আমলে নেয় না। এখন এই ক্ষতি আমরা কিভাবে পোষাবো।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রপ্তানি-আমদানি পণ্য প্রধানত চারটি ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর দিয়েই চলাচল করে। সিঙ্গাপুর, কলম্বো এবং মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাঙ, তানজুম পেলিপাস বন্দর। জানুয়ারি-এপ্রিল গত চার মাসে ২ লাখ ৮৫ হাজার একক রপ্তানি পণ্যভর্তি কন্টেইনার এই চার বন্দর দিয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় গেছে। প্রায় ৫০ শতাংশ রপ্তানি পণ্য শুধুমাত্র কলম্বো বন্দর দিয়েই চলাচল করে।
বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা কলম্বো বন্দর দুই কারণে অগ্রাধিকার দেয় সেগুলো হচ্ছে, লীড টাইম কম এবং পণ্য পরিবহন খরচ কম। কিন্তু করোনা মহামারি শুরু থেকে সাম্প্রতিককালে কলম্বো বন্দর আগের সেই অর্জন ধরে রাখতে পারেনি। এতে অনেকেই কলম্বো বন্দর বিমুখ হচ্ছিল।
বিদেশি জাহাজের মেইন লাইন অপারেটর বলছেন, চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে চারটি ফিডার জাহাজ কম্পানির ২২টি কন্টেইনার জাহাজ চলাচল করে। তারা সবাই এখন উদ্বিগ্ন কবে নাগাদ এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। চট্টগ্রাম বন্দর-কলম্বো রুটের একটি কন্টেইনার জাহাজ ‘এমটিটি সিঙ্গাপুর’ গত ৫ মে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রপ্তানি পণ্য নিয়ে ৯মে কলম্বো বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে। এরপর থেকে তিনদিন অপেক্ষার পর আজ ১২মে সকালে জাহাজটি কলম্বো বন্দরে ভিড়তে পেরেছে। ফলে এই তিনদিনের আর্থিক ক্ষতির বোঝাই বইতে হচ্ছে জাহাজ মালিকদের। অবশ্য শেষপর্যন্ত এই মাসুল পরিশোধ করতে হবে আমদানিকারক, শেষে ভোক্তাকেই।