২১০ একক আমদানি পণ্যভর্তি কন্টেইনার বোঝাই করা ‘মেরিন ট্রাস্ট-১’ জাহাজটি শেষপর্যন্ত পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। জাহাজটি গত ২৫ মার্চ কলকাতা শ্যামপ্রাসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দরের জেটিতে কন্টেইনার বোঝাইয়ের শেষদিকে জাহাজটি কাত হয়ে প্রায় ডুবে গেছিল। এরপর জাহাজে থাকা ১৫ বাংলাদেশি নাবিক প্রাণে রক্ষা পান। গত ৩৫ দিন ধরে সেই নাবিকরা কলকাতার সী ম্যান্স হোস্টেলে আটকা পড়েছেন।
এদিকে উদ্ধার কার্যক্রমে ৩০টি কন্টেইনার পানি থেকে তোলা হয় কিন্তু সেই পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে।বাকি ১৮৭ কন্টেইনারের বেশকিছু কন্টেইনার পানিতে আছে। অনেকগুলো কাত হয়ে জাহাজে আছে। এই অবস্থায় উদ্ধার কাজের একপর্যায়ে জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। আর জাহাজের ১৫ নাবিককে দেশে ফেরানাের উদ্যোগ নেয়।
কেন পরিত্যক্ত ঘোষনা করলেন জানতে চাইলে জাহাজটির পরিচালনা সংস্থা মেরিন ট্রাস্ট গ্রুপের পরিচালক (আর্ন্তজাতিক) শেখ সাইকুল ইসলাম বলেন, আমরা উদ্ধারকাজের জন্য একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছিলাম। প্রতিষ্ঠানটি ভালোভাবে এক তৃতীয়াংশ কাজ সম্পন্ন করে ফেলেছে। একপর্যায়ে ইন্সু্রেন্স নিয়ে কলকাতা বন্দরের সাথে এই প্রতিষ্ঠানের জটিলতা তৈরি হয়। এরপর থেকেই কাজ বন্ধ থাকে। পরে আমরা জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করি।
তিনি বলেন, জাহাজের ক্ষতির পরিমান আমরা এখনো পাইনি। আর পানিতে থাকা পণ্যভর্তি কন্টেইনারের কী দশা সেটি জানতে পারিনি। এখন নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে দুই দেশের সহযোগিতা চেয়েছি। আর নাবিকদের বেতন নিয়মিত রেখেছি। খাবার=দাবার, থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি।
নাবিকরা কলকাতা সী ম্যান হোস্টেলে বর্তমানে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন বলে অভিযোগ নাবিকদের। বাংলাদেশ সরকার বা ভারত কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁদেরকে দেশে ফেরাতে উদ্যোগ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ নাবিকদের।
২৮ এপ্রিল এক ভিডিও বার্তায় জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী ফাহিম ফয়সাল বলেন, তাঁরা কলকাতা ও বাংলাদেশে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু দেশে ফেরাতে কেউ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। দেশের মালিকপক্ষ নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কয়েক দিন ধরে আর কোনো যোগাযোগ করছে না। হোস্টেলে যেকোনো সময় খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। নাবিকদের সবাই দেশে ফিরতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে উচ্চস্বরে আকুতি জানাতে থাকেন।
ফাহিম ফয়সাল বলেন, ‘আমাদের বাঁচান, আমাদের যেন বলির পাঠা বানানো না হয়। আমরা বাঁচতে চাই। আমাদের জীবন হুমকির মুখে। যেকোনো সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে। আমরা সবাই এক কাপড়ে আছি। আমরা নিরুপায়।’