১৫ বছর পর অবশেষে কী গ্যান্ট্রি ক্রেন মেরামত হচ্ছে

বিশেষ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম কন্টেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) পণ্য উঠানামায় ব্যবহৃত আধুনিক কী গ্যান্ট্রি ক্রেন অবশেষে মেরামত করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ওই টার্মিনালে প্রথম কী গ্যান্ট্রি ক্রেন সংযোজন করা হয়েছিল ২০০৫ সালে। সংযোজনের ১৫ বছর পর এই প্রথম ক্রেনগুলো বড় ধরনের মেরামত করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে মেরামত বা সার্ভিসিং না করায় পণ্য উঠানামার সময় ক্রেনগুলো প্রায়ই বিকল হচ্ছিল। এতে পণ্য উঠানামার গতিও কমে গিয়েছিল।
এখন পর্যন্ত একটি মেরামত শেষ হয়েছে; আরেকটি মেরামত কাজ আগামী সপ্তাহে শেষ হবে। ধাপে ধাপে বাকি দুটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনও মেরামত করা হবে। মেরামত শেষে চালু হলে পণ্য উঠানামায় গতি পাবে আশা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, দুটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন মেরামত করতে খরচ হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। আর নতুন একটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন ৫৮ কোটি টাকা। এত বিপুল টাকা ব্যয়ে মেরামত করার বদলে নতুন কী গ্যান্ট্রি ক্রেন কেনাই সবচে ভালো সিদ্ধান্ত হতো। কারণ সিসিটি’র গ্যান্ট্রি ক্রেনগুলো অনেক পুরণো মডেলের।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক শিপিং এক্সপ্রেসকে বলেন, আমরা প্রথমধাপে দুটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন মেরামত করছি। বাকি দুটি এখনও ভালো পারফরম্যান্স দিচ্ছে তাই পরবর্তী ধাপে সেই দুটি মেরামত করা হবে। দুটি মেরামত শেষ হলে অনেকটা আগের মতোই পণ্য উঠানামা করা সম্ভব বলে।
তিনি বলেন, চাইলে তো নতুন দুটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন কেনা সম্ভব নয়। তাই পুরণো হলেও সেগুলো মেরামত করেই যতদিন সম্ভব চালাতে হবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের দুটি টার্মিনালে মোট ১৪টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন রয়েছে। কেনা হচ্ছে আরও চারটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন। বন্দর কর্তৃপক্ষ চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) ২০০৫ সালে প্রথম চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত করে পণ্য উঠানামা শুরু করে।চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেনই জাপানের মিতসুই কর্পোরেশনের তৈরী। সেই টার্মিনালে সুফল পাওয়ায় ২০০৭ সালে নির্মিত আরেক টার্মিনাল নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)তে কী গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু সেই গ্যান্ট্রি ক্রেন কিনতে বন্দরের সময় লাগে ১২ বছর। ২০১৯ সালে এনসিটিতে যুক্ত হয় ১০টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন; সবগুলো কেনা হয়েছে চীন থেকে। চীনের জেডপিএমসি প্রতিষ্ঠান থেকে। এই ক্রেন দিয়ে পণ্য উঠানামার ফলেই প্রতিবছর বাড়তি কন্টেইনার উঠানামার সুফল ভোগ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই ধারাবাহিকতায় এনসিটিতে আরও চারটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
২০০৫ সালে কেনার পর চট্টগ্রাম কন্টেইনার টার্মিনালের চারটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনই প্রায় সময় বিকল হচ্ছিল। সর্বশেষ ২০১৭ সালে এক বিদেশি জাহাজের ধাক্কায় সিসিটির দুটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনই অচল হয়ে পড়েছিল। অনেক মাস ধরে সেই ক্রেন অচল থাকায় সেই জেটিতে ক্রেনযুক্ত জাহাজই ভিড়ানো হতো।
বিদেশি শিপিং লাইনের এক কর্মকর্তা শিপিং এক্সপ্রেসকে বলছেন, সিসিটির কী গ্যান্ট্রি ক্রেনগুলো প্রায়ই কাজ করার মাঝপথে অচল হতো। এরফলে ঘন্টায় ২৫ থেকে ৩০ কন্টেইনার নামানোর নির্ধারিত লক্ষমাত্রার বিপরিতে হতো মাত্র ১০-১৫ কন্টেইনার। গতি কমে যাওয়ায় জাহাজের বাড়তি সময় লাগতো।