বাংলা নিউজ

মোংলা বন্দরে ‘বারভিডা লেভি’ আদায় অবৈধ, সরকারী কোষাগারে ফেরতের নির্দেশ

চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত গাড়ি ছাড় করার সময় ‘বারভিডা লেভি’র নামে চাঁদা আদায়কে অবৈধ উল্লেখ করে তা আদায় স্থগিত করেছেন উচ্চ আদালত। আর আদায়কৃত সব টাকা সরকারী কোষাগারে ফেরতের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। লেভি বাবদ শুধুমাত্র মোংলা বন্দর থেকেই অন্তত ৭০ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আদালত রায়ে এও বলেছেন, আজকের পর থেকে লেভি আদায় করা আদালত অবমাননার শামিল। এরপরও যদি এই লেভি আদায় করা হয় তাহলে দন্ডবিধির ৩৮৫ ধারামতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। বারভিডার সদস্য দীনুল ইসলামের করা মামলায় ২৬ অক্টোবর এই রায় দেন বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম এবং এম. মোস্তাফিজুর রহমান। একইসাথে চাঁদা আদায়ের প্রতিবাদকারী দীনুল ইসলামের বাতিল করা সদস্যপদ ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

দীনুল ইসলামের মামলার আইনজীবী এডভোকেট আমান উল্লাহ বলেন, ‌আদালত সুষ্পষ্টভাবে লেভির নাম দিয়ে চাঁদা আদায়কে অবৈধ বলেছেন, তা স্থগিত এবং সরকারী কোষাগারে ফেরতেরও নির্দেশ দিয়েছেন। একইসাথে দীনুল ইসলামের সদস্যপদও ফেরতের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের রায়ের মধ্য দিয়েই প্রমানিত হয়, গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেটি অন্যায়-অবৈধ।

উল্লেখ্য, বারভিডার ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভায় চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি করা গাড়িগুলো থেকে এক হাজার টাকা লেভি আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, বারভিডার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়নে তহবিল বাড়াতে এ লেভি আদায় করা হচ্ছে। গত ৫ নভেম্বর থেকে মোংলা বন্দরে এই লেভি আদায় কার্যক্রম শুরু হয়।

উল্লেখ্য, রিকন্ডিশন্ড বা একবার ব্যবহৃত গাড়ি চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ছাড় করার আগে এক হাজার টাকা লেভি বা চাঁদা আদায় ২০২০ সালের নভেম্বর থেকেই শুরু করছিল গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডা। বাংলাদেশ রিকন্ডিশন ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন বা বারভিডার পক্ষে এই লেভি প্রথম আদায় শুরু করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ১০০ টাকা নিজেদের জন্য রেখে বাকি ৯০০ টাকা বারভিডা তহবিলে জমা করবে মোংলা বন্দর। কিন্তু বেসরকারি সংগঠনের চাঁদা সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আদায়ের আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন বারভিডার সদস্য দীনুল ইসলাম। এ নিয়ে তখন গাড়ি ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রচন্ড প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর লেভি আদায় থেকে পিছু হটে। এই ধরনের অভিযোগ করায় ক্ষুদ্ধ হয়ে বারভিডা নেতৃবৃন্দ দীনুল ইসলামের সদস্যপদ বাতিল করে দেয়।

একইসাথে সংগঠনের আর্থিক অনিয়ম এবং প্রধানমন্ত্রীর করোনা তহবিলের টাকা তছরুপের অভিযাগকারী বারভিডা নেতা এস এম আনোয়ার সাদাতের সদস্যপদ ফিরিয়ে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ২৫ অক্টোবর বারভিডা নেতা এস এম আনোয়ার সাদাতের মামলার রায় দেন হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিল।

বারভিডার সহ-সভাপতি এবং কে কে অটোমোবাইলসের মালিক এস এম আনোয়ার সাদাত বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর করোনা তহবিলে দেয়ার নামে সদস্যদের কাছ থেকে আদায় করা ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ের হিসাব আমি চেয়েছি। কারণ এই টাকা থেকে মাত্র একটি অ্যাম্বুলেন্স কিনে বাকি টাকা আত্নসাত করা হয়েছিল। এর কৈফিয়ত চাওয়ায় আমার পর ক্ষুদ্ধ হয় বারভিডা নেতৃত্ব। সেইসাথে স্জনপ্রীতি করা এবং বার্ষিক সাধারন সভার (এজিএম) এর নামে ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা অনিয়মের হিসাব চেয়েছিলাম আমি। কারণ এই টাকা সাধারন সদস্যের। আমি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জবাব চাওয়ায় আমার ভাইসপ্রেসিডেন্ট এবং সদস্যপদ অন্যায়ভাবে যে কেড়ে নেয়া হয়েছিল আজকে আদালতে সেটি প্রমান হয়েছে। অথচ আমার অভিযোগের এখনও কিনারা করতে পারেনি বারভিডার বর্তমান কমিটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button