মাত্র ১৯ দিনে ইতালি থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছলো ‘সুঙ্গা চিতা’ জাহাজ

ইতালির ’সালেরনো বন্দর’ থেকে ‘চট্টগ্রাম বন্দর’ পর্যন্ত সমুদ্রপথের দুরত্ব ৬৫৫৯ নটিক্যাল মাইল। ইতালি থেকে রওনা দিয়ে একটি জাহাজ ১০ নটিক্যাল মাইল গতিতে চললে মিশরের সুয়েজ খাল দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর পৌঁছতে সময় লাগার কথা সাড়ে ২৭ দিন। কিন্তু লাইবেরিয়ার পতাকাবাহি ‘সুঙ্গা চিতা’ নামের ছোট কন্টেইনার জাহাজটির সময় লেগেছে মাত্র ১৯ দিন।
ইতালির সালেরনো বন্দর থেকে ১৭ জানুয়ারি রওনা দিয়ে প্রায় এক হাজার একক কন্টেইনার বোঝাই করে ‘সুঙ্গা চিতা’ জাহাজটি সুয়েজ খাল পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে পৌঁছেছে ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে। এরমধ্যে সালেরনো বন্দর থেকে মিশরের পোর্ট সাঈদ বন্দরে পৌঁছে ২০ জানুয়ারি। পোর্ট সাঈদে সাড়ে ২২ ঘন্টা যাত্রা বিরতি দেয় জাহাজটি। এরপর চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি জেটিতে পৌঁছতে জাহাজটির সময় লাগে ৫ ফেব্রুয়ারি অর্থ্যাৎ ঘড়ির কাটায় ১৯ দিন।
খালি আমদানি পণ্য নামানো শেষে জাহাজটিতে শনিবার রাতেই রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনার জাহাজে তোলা হবে।জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে ৯৮৩ একক কনটেইনার পণ্য নিয়ে যাবে ইতালিতে। এসব কনটেইনারের ৯৯ শতাংশই দেশের পোশাক শিল্পের। ইতালির পাশাপাশি জার্মানিরও কিছু পণ্য রয়েছে, যেগুলো ইতালি থেকে সড়কপথে জার্মানি নেওয়া হবে। রপ্তানি পণ্য নিয়ে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। এরমধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম-ইতালি সরাসরি কন্টেইনার জাহাজ সার্ভিস শুরু হচ্ছে; যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। শুধু তাই-ই নয় চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপে সরাসরি পণ্য পরিবহনের সুযোগ তৈরী হলো।
এতদিন চট্টগ্রাম থেকে একটি রপ্তানি পণ্যভর্তি কন্টেইনার প্রথমে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর যেমন- সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকার কলম্বো, মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাঙ ও তানজুম পেলিপাস যেত। সেখান থেকে আরেকটি বড় জাহাজে তুলে ইউরোপ যেতে ৩০-৩৫ দিন সময় লাগতো। ভোগান্তিও হতো। এখন কোন বন্দরে বিরতি ছাড়াই ১৬ থেকে ১৯ দিনেই পৌঁছানোর সুযোগ তৈরী হলো।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ নেতা ও এশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলছেন, ‘ইতালিতে সরাসরি জাহাজ সার্ভিস চালুর উদ্যোগে আমরা পোশাক শিল্প বিশ্ব প্রতিযোগিতায় আরো এগিয়ে যাওয়ার নতুন সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। জার্মানি হচ্ছে আমাদের বড় ক্রেতা চট্টগ্রাম থেকে ইতালি নিয়ে সেই পণ্য সড়কপথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যদি নেয়া যায় তাহলে এটা এক বিশাল সম্ভাবনা তৈরী করবে। কারণ যত বেশি কানেকটিভিটি তত বেশিই অর্ডার আসবে দেশে। এতে অনুপ্রানিত হয়ে ইউরোপের অন্য দেশেও চট্টগ্রামের সাথে সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিতে এগিয়ে আসবেন অনেকেই।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যের শীর্ষ সপ্তম গন্তব্য ইতালি। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশটিতে রপ্তানি হয় ১৩০ কোটি ডলার পণ্য, যার ৯৫ শতাংশই পোশাক। একই সময়ে ইতালি থেকে আমদানি হয় ৪৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের পণ্য, যার অর্ধেকই মূলধনি যন্ত্রপাতি।
বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ৪৫ শতাংশই রপ্তানি হয় ইতালির মতো ইউরোপের ২৭টি দেশে। গত অর্থবছরে রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৪৬ ডলার। বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া মোট ৭ লাখ ২৯ হাজার একক কনটেইনারের মধ্যে ৩ লাখ কনটেইনারই নেওয়া হয়েছে ইউরোপে।
জানতে চাইলে জাহাজ পরিচালনাকারী কম্পানির শিপিং এজেন্ট রিলায়েন্স শিপিং এন্ড লজিস্টিকসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, কোন জটিলতা ছাড়াই জাহাজটি পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। এরপর কয়েকঘন্টার মধ্যেই জাহাজটি জেটিতে ভিড়তে সক্ষম হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজটিকে ‘অন এরাইভাল’ বার্থিং সুযোগ দেয়ায় জাহাজটিকে কোন অপেক্ষাই করতে হয়নি।
তিনি বলেন, আসার পর থেকেই জাহাজ থেকে কন্টেইনার নামানো শুরু হয়েছে। খালি-আমদানি কন্টেইনার নামানো শেষে রাত নাগাদ জাহাজে রপ্তানি কন্টেইনার তোলা হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা দুটি কন্টেইনার জাহাজ দিয়েই আমরা এই সেবা দিব। গ্রাহক চাহিদা বাড়লে সেটি আরো বাড়বে।