কিন্তু গভীর সমুুদ্রবন্দর চালু হবে ২০২৫ সালে; তার চার বছর আগেই আগামী ২৯ ডিসেম্বর এই বন্দরে প্রবেশের জন্য নির্মিত চ্যানেল দিয়ে পণ্যবাহী প্রথম বিদেশি জাহাজ প্রবেশ করবে। এসব পণ্য নামানো হবে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্মিত জেটিতে। এর মধ্য দিয়ে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে প্রবেশের জন্য নির্মিত চ্যানেলটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করছে।
মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এরই মধ্যে দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মিত হয়েছে। নির্মিত হয়েছে ভারী পণ্য উঠানামার জন্য ১৮০ মিটার দীর্ঘ জেটি। এর অন্য পাশেই গড়ে উঠবে দেশের প্রথম মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর। নৌ পরিবহন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ এবং বন্দরের সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা গতকাল শুক্রবার এই চ্যানেল ও সার্বিক কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন করেন।
বন্দর চেয়ারম্যান গতকাল শুক্রবার বিকেলে শিপিং এক্সপ্রেসকে বলেন, মাতারবাড়ী চ্যানেল দিয়ে জাহাজ প্রবেশের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তুতি সম্পন্ন। এরই মধ্যে সেখানে ছয়টি বয়া (জাহাজ চলাচলের পথনির্দেশক) স্থাপন করা হয়েছে। বন্দর জলসীমার মধ্যে থাকায় মাতারবাড়ী বন্দরও অপারেশন করবে চট্টগ্রাম বন্দর। ফলে গভীর সাগর থেকে জাহাজ চালিয়ে জেটিতে নেওয়ার কাজটি করবেন বন্দরের পাইলটরাই। ইতোমধ্যে তাদের প্রশিক্ষন সম্পন্ন হয়েছে; পরীক্ষামূলক ট্রায়াল হয়েছে।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য জাহাজ জেটিতে ভিড়ার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। আশা করছি সেটি ডিসেম্বরেই হবে। যেদিনই জাহাজ ভিড়ুক সেদিন থেকেই বন্দর কর্তৃপক্ষ সব ধরনের মাসুল আদায় করবে-যোগ করেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দর মেরিন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, একটি জাহাজ ভিড়ানোর জন্য সবকিছুই এখন প্রস্তুত। বয় বসানো ছিল শেষধাপ। বন্দরের পাইলটরা বহির্নোঙর থেকে চ্যানেল দিয়ে জাহাজ চালিয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের নির্মিত জেটিতে নিবেন। আবার পণ্য নামানো শেষে জাহাজটি চালিয়ে বঙ্গোপসাগরে নিয়ে আসবেন। কারণ বিদেশি পাইলটরা এই ধরনের চ্যানেল সর্ম্পকে সম্পূর্ণ অবগত নন।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় বঙ্গোপসাগরে ২৫০ মিটার চওড়া ও ১৮ মিটার গভীর করে খনন করা হয়েছে এই চ্যানেল। অর্থাৎ এই চ্যানেল দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে দ্বিগুণ গভীরতার জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর দিয়ে বর্তমানে সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ মিটার গভীর ও ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ প্রবেশ করতে পারে।
চট্টগ্রাম বন্দর সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম বলেন, ‘কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণসামগ্রী আনার জন্য এরই মধ্যে দুটি জেটি নির্মিত হয়েছে। সেই জেটিতে জাহাজ ভিড়বে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে। এর মধ্য দিয়ে এই চ্যানেলে আনুষ্ঠানিকভাবে জাহাজ ভিড়তে শুরু করবে। তবে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য আমাদের চ্যানেলে ২৫০ থেকে ৩৫০ মিটার চওড়া করতে হবে। আর জেটি-টার্মিনাল ও অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। সেই কাজ করতে আমাদের সময় নির্ধারণ করা আছে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। তবে আমরা আশা করছি, ২০২৫ সালের মধ্যেই সেটি নির্মাণ শেষ করে গভীর সমুদ্রবন্দরের জেটিতে জাহাজ ভেড়াতে পারব।’