মাতারবাড়ীতে ভিড়লো প্রথম পণ্যবাহি জাহাজ

বিশেষ প্রতিনিধি
মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরে জাহাজ প্রবেশের জন্য নির্মিত চ্যানেল দিয়ে প্রথমবার প্রবেশ করেছে বানিজ্যিক জাহাজ। আজ ২৯ ডিসেম্বর পানামার পতাকাবাহি ‘ভেনাস ট্রায়াম্প’ জাহাজটি চ্যানেল দিয়ে প্রবেশ করে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য নির্মিত হেভি লিফট বা ভারী কার্গো নামানাের জেটিতে ভিড়েছে। এরমধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলো মাতারবাড়ী চ্যানেল।
মাতারবাড়ী ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হয়েছে এসব অবকাঠামো নির্মান সামগ্রী। ইন্দোনেশিয়ার সিলেগন সমুদ্রবন্দর থেকে ‘ভেনাস ট্রায়াম্প’ জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে মঙ্গলবার সকালে। এরপর বন্দরের নিজস্ব সিনিয়র পাইলট ক্যাপ্টেন রহমত উল্লাহ জাহাজটি চালিয়ে কয়লা বিদ্যুতকেন্দ্রের জেটিতে নিয়ে যান। বহির্নোঙরে পৌঁছার পর শুধুমাত্র পাইলট উঠার জন্য জাহাজটিকে এক ঘন্টা নোঙর করতে হয়েছে; এরপর ৮টায় পাইলট জাহাজে উঠেন। এবং সকাল ১০টা ২০মিনিটে বহির্নোঙর থেকে জেটির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। জানতে চাইলে জানতে চাইলে মাতারবাড়ীেত জাহাজ ভিড়ানোর কাজ সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা সহকারি হারবার মাস্টার আতাউল হক সিদ্দিকী শিপিং এক্সপ্রেসকে বলেন, এটি সত্যিই শুধু চট্টগ্রাম বন্দর নয়; সারাদেশের জন্য ঐতিহাসিক একটি দিন। কারণ এরমধ্য দিয়ে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দরে জাহাজ প্রবেশের জন্য নির্মিত চ্যানেলটি যাত্রা শুরু করলো। একইসাথে বানিজ্যিক জাহাজ জেটিতে ভিড়লো। এর মাধ্যমে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মান কাজ ত্বরান্বিত হবে।
জাহাজটি জেটিতে ভিড়ার পর পণ্য নামিয়ে চলে যেতে ৪/৫ দিন সময় লাগবে-যোগ করেন তিনি।
জানা গেছে, কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মানের আগে প্রস্তুত হয়েছে আড়াইশ মিটার প্রস্থ, ১৮ মিটার গভীরতা এবং ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল। এই চ্যানেল বা প্রবেশথ দিয়েই বঙ্গোপসাগর থেকে জাহাজ বন্দর জেটিতে প্রবেশ করবে। গভীর সাগর থেকে জাহাজগুলো চ্যানেল দিয়ে জেটিতে প্রবেশের জন্য বসানো হয়েছে পথ নির্দেশক ছয়টি বয়। চট্টগ্রাম বন্দরের মেরিন বিভাগ সাগরে এসব বয় স্থাপন ইতোমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। অর্থ্যাৎ নতুন নির্মিত চ্যানেল দিয়ে জাহাজ প্রবেশ পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল। উল্লেখ্য, জাহাজ প্রবেশের চ্যানেলের একপাশে নির্মিত হয়েছে তিনটি জেটি; যেগুলো ব্যবহৃত হবে বিদ্যুত কেন্দ্রের নির্মান সামগ্রী উঠানামার কাজে। আর অপরপাশেই গড়ে উঠবে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর। এই সমুদ্রবন্দর চালু হবে ২০২৫ সালে। কিন্তু তার আগেই ব্যবহার শুরু হচ্ছে সমুদ্রবন্দরের জন্য নির্মিত চ্যানেল বা জাহাজ প্রবেশের পথ। মাতারবাড়ী চ্যানেলের গভীরতা ১৮ মিটার এবং দৈর্ঘ্য ১৪ কিলোমিটার। কিন্তু ‘ভেনাস ট্রায়াম্প’ জাহাজটি সেই তুলনায় একেবারে ছোট। জাহাজটির গভীরতা মাত্র সাড়ে ৫ মিটার এবং দৈর্ঘ্য ১২০ মিটার। ফলে সেটি অনায়াসেই জেটিতে প্রবেশ করতে পেরেছে।
এদিকে মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য নির্মিত জেটিতে জাহাজ ভিড়ানোর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। যেহেতু মাতারবাড়ী পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর জলসীমা বিস্তৃত; তাই সেখানে জাহাজ ভিড়লে ‘পোর্ট অব কল’ ধরা হবে চট্টগ্রাম বন্দরকেই। অর্থ্যাৎ যাবতীয় মাসুল চট্টগ্রাম বন্দরই পাবে; জাহাজের পাইলটিং করবে চট্টগ্রাম বন্দরই।