বন্দর ইয়ার্ডে পঁচে গলে নষ্ট হওয়া ৬ হাজার টন আমদানি পণ্য ধ্বংস করলো কাস্টমস

বিশেষ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে বছরের পর বছর পঁচে গলে নষ্ট হওয়া ৬ হাজার টন আমদানি পণ্য ধ্বংস করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে পড়ে থাকা এসব পণ্য ধ্বংস করে বন্দর কর্তৃপক্ষ ২৬৮ একক কন্টেইনারের সমপরিমান স্থান খালি করতে পেরেছে। সেনা সমর্থিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের পর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এত বিপুল পরিমান পণ্য ধ্বংসের উদ্যোগ প্রথম।
পণ্য সরিয়ে নেয়ার সবচে বেশি খুশি কন্টেইনার মালিকপক্ষ; আর স্বস্তিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক শিপিং এক্সপ্রেসকে বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর সংরক্ষিত এলাকার ভিতর প্রতি ইঞ্চি জমি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের স্থান যতবেশি ব্যবহার হবে তত বেশি আয়। এরচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমাদের কাছে পণ্য পরিচালন ব্যবস্থার জন্য যথেষ্ট খালি স্থান নেই। তাই ২৬৮ একক কন্টেইনারের সমান স্থান খালি হওয়ায় আমাদের পণ্য রাখার স্থান যেমন বাড়বে; তেমনি পণ্য উঠানামা কাজে এই স্থান সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম শিপিং এক্সপ্রেসকে বলছেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিয়মিত নিলাম আয়োজনের যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটির ধারাবাহিকতা থাকলে বন্দর ইয়ার্ডে পণ্য ফেলে রাখার প্রবনতা কমবে। একইসাথে পণ্য ধ্বংসের কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে বন্দর থেকে পণ্যছাড়ে শৃঙ্খলা ফিরবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৯ হাজার একক কন্টেইনার রাখার স্থান আছে। স্বাভাবিক সময়ে এই স্থান নিয়ে তেমন সমস্যা না হলেও বিশেষ কিছু সময়ে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারন করে। বিশেষ করে বাজেটের সময়, রমজানের আগে। সেই সময়ে একটি কন্টেইনার রাখতেও বন্দরকে বেগ পেতে হয়। সর্বশেষ গতবছর কভিড-১৯ মহামারির সময়ে কন্টেইনার জট নিয়ে এমন জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল; স্থান দিতে না পেরে পণ্যবাহি কন্টেইনার জাহাজকে জেটি ভিড়া পর্যন্ত নিয়ন্ত্রন করতে হয়েছিল।
এখন চট্টগ্রাম বন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও আমদানি বেড়ে গেলেই জটিলতা তৈরী হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। এখন বন্দর কর্তৃপক্ষকে পণ্য দ্রুত ডেলভারি নিতে বিশেষ কড়াকড়ি আরোপ করছে। শুধু তাই নয়, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এখন জাহাজ থেকে পণ্য নামার ৩০ দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ছাড় নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে পণ্য নামার ২১ দিনের মধ্যে ছাড়ের বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে। সেটি কার্যকর না হলে আমরা নিয়মিতই পণ্য নিলামে তুলব। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম।’
কাস্টমস কমিশনারের এমন উদ্যোগ বেশ সুফল এসেছে। গত একবছর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্দরে পড়ে থাকা ৬ হাজার টন পণ্য হালিশহর সাগর পাড়ে নিয়ে গিয়ে ধ্বংস করেছে। এসব পণ্যের বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। একইসাথের বাইরে মেয়াদোত্তীর্ণ এবং বিপজ্জনক ৫৫ টন রাসায়নিক পদার্থও পরিবেশ সম্মতভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতর বিপজ্জনক পণ্য রাখার ঝুঁকি কিছুটা কমেছে; আর বন্দরের ভেতর পণ্য পরিচালন ব্যবস্থায় গতি এসেছে। মূলত লেবাননের রাজধানী বৈরুতের সমুদ্রবন্দরে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা বিপজ্জনক রাসায়নিক বিস্ফোরণের পর চট্টগ্রাম বন্দরের টনক নড়ে।