চট্টগ্রাম বন্দর ও বন্দর সংশ্লিষ্ট সরকারী-বেসরকারী স্থাপনার নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখতে চট্টগ্রাম এসেছে যুক্তরাষ্ট্র কোস্টগার্ডের একটি প্রতিনিধিদল; যারা আইএসপিএস কোড বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা সরেজমিনে দেখবে। প্রথমদিন চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা পর্যবেক্ষন করেছে দলটি। আজ বুধবার বেসরকারী কন্টেইনার ডিপো, ইপিজেডসহ অন্যান্য স্থাপনা প্রত্যক্ষ করবে দলটি।
আইএসপিএস কোড বাস্তবায়নে যে ১৬ দফা সুপারিশ দেয়া হয়েছিল সেগুলো কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা চুড়ান্তভাবে পরিদর্শনে আগামী আগস্টে আসবে মুল দলটি। এখনকার দলটি অগ্রবর্তী দল। মুলত বিএম কন্টেইনার ডিপোর নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার পর জরুরিভাবে বন্দর নিরাপত্তা দেখতে আসলো কোস্টগার্ডের দলটি। আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত তারা বাংলাদেশে থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ডের এই সফরকে গুরুত্ব দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাদের সফরসূচি জানার পর বন্দর ব্যবহারকারীদের নিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করে বেশ কিছু দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে। ডেঞ্জারাস কার্গো নিয়ে জরুরি কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে; রাসায়নিক বা পড়ে থাকা বিস্ফোরক পদার্থ দ্রুত সরিয়ে নিতে পদক্ষেপ নিয়েছে। অকশন দ্রুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু আইএসিপএস টীমের ১৬ দফা সুপারিশের প্রধান ছিল সবগুলো গেইটে কন্টেইনার স্ক্যানার বসানো। সেটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল যেসব পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল, তার বেশির ভাগই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকা স্ক্যানার যন্ত্র সংগ্রহের দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। শিগগিরই তা সংগ্রহ করে রাজস্ব বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করা হবে। রপ্তানি পণ্য স্ক্যানিংয়ের আওতা বাড়বে।
যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সেসব দেশে ‘আন্তর্জাতিক বন্দর নিরাপত্তা কর্মসূচি’র আওতায় বন্দর ও বন্দরসহায়ক স্থাপনার নিরাপত্তাব্যবস্থা খতিয়ে দেখে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থার নিরাপত্তাব্যবস্থা–সংক্রান্ত আইএসপিএস কোড (জাহাজ ও বন্দর স্থাপনার নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম) বাস্তবায়নকে প্রাধান্য দেয় তারা। সমুদ্রে নাবিকদের জীবনের নিরাপত্তাবিষয়ক কনভেশন সেফটি অব লাইফ অ্যাট সি বা সোলাসের আওতায় আইএসপিএস কোড রয়েছে। ২০০৪ সালের ১ জুলাই থেকে এই কোড বাস্তবায়ন শুরু হয় বাংলাদেশেও।
এর আগে ২০১৭ সালে বন্দর পরিদর্শন করে মার্কিন প্রতিনিধিদলটি ১৬ দফা পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল। সেই ১৬ দফা পর্যবেক্ষণের বাস্তবায়ন অগ্রগতি দেখতে ২০১৯ সালে পরিদর্শনে আসে তারা। তখন বন্দরের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রতিনিধিদলটি। এরপরও সাইবার নিরাপত্তায় গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানায়। আবার পণ্য খালাস নিতে আসা গাড়ির চালক ও সহকারীদের দীর্ঘ সময় বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় অবস্থানকে নিরাপত্তাঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করে তারা। করোনার কারণে দুই বছর বন্দর পরিদর্শন করেনি প্রতিনিধিদলটি। তাই এবারের পরিদর্শনে নিরাপত্তাসংক্রান্ত সব কটি বিষয় যাচাই করার কথা রয়েছে।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, রপ্তানির বড় অংশের গন্তব্য ইউরোপ–আমেরিকা। এসব দেশে পণ্য রপ্তানিতে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য বন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে সব সময় গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তাদের পর্যবেক্ষণগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বাস্তবায়ন করা দরকার।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, মানুষ ও যানবাহন আসা-যাওয়ার ফটকে উন্নত মানের নিরাপত্তাব্যবস্থা চালু, রপ্তানি পণ্যের স্ক্যানিং কার্যক্রম, বন্দর এলাকায় সিসিটিভির আওতা বাড়ানো, সীমানাদেয়াল তদারকিতে ক্যামেরা বসানো, জেটি এলাকা থেকে পণ্য খালাস সরিয়ে নেওয়া, সন্দেহভাজন গাড়ি দৈবচয়ন ভিত্তিতে যাচাইয়ের মতো অনেকগুলো বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তুলে ধরেছিল যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড। এর মধ্যে অনেকগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে। রপ্তানি পণ্য স্ক্যানিংয়ের কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।