দেশের সমুদ্রপথে জাহাজের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে বছরে খরচ হয় ৯ হাজার বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে মাত্র ১০ ভাগ পরিবহন হয় নিজস্ব দেশিয় জাহাজের মাধ্যমে। দেশিয় পতাকাবাহি জাহাজের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারলে বছরে সাড়ে চার হাজার বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে।
আজ ২৪ অক্টোবর যৌথভাবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালার এসব তথ্য জানানো হয়।
মূল প্রবন্ধে রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খোরশেদ আলম বলেন, ‘দেশের সমুদ্র পথে জাহাজের মাধ্যমে আমদানি-রফতানিতে ৯ হাজার বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। জাহাজের মাধ্যমে পণ্য আমদানি-রফতানির মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ হচ্ছে নিজস্ব পরিবহনে। সমুদ্র পথে ৫০ শতাংশ পণ্য নিজস্ব জাহাজের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি করতে পারলে সাড়ে ৪ হাজার বিলিয়ন ডলার সঞ্চয় হবে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের পর বিশ্বব্যাপী কন্টেইনার সংকটে পড়েছে। জাহাজের পাশাপাশি সুযোগ এসেছে কন্টেইনার উৎপাদনের। এসব সুযোগ এখনই কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।’
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। এতে বক্তব্য দেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, এ কে এনামুল হকসহ বিডা ও এফবিসিসিআইয়ের নেতারা।
কর্মশালায় সালমান এফ রহমান বলেন, আমাদের পোশাকশিল্প একদিনে এ অবস্থানে আসেনি। পোশাক শিল্পে ব্যাক টু ব্যাক এলসি ও বন্ডের মাধ্যমে বিক্রি। আমাদের সম্ভাবনাময় শিল্প ছিল জাহাজ তৈরি। ইউরোপসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় জাহাজ রপ্তানি করা হয়েছিল। আজ সেই রপ্তানির খবর আর সামনে আসে না। এই সম্ভাবনাময় শিল্পের সমস্যা সমাধান করে এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। করোনার পর থেকেই আমাদের কনটেইনার সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকটে সুযোগ এসেছে কনটেইনার উৎপাদনের, আমাদের সেদিকে নজর দিতে হবে।
তিনি বলেন, ইলেকট্রনিকস ও আইসিটি সেক্টরেরও সুযোগ এসেছে। শিল্পখাতের জন্য সরকার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। আমরা আশা করি, ইলেকট্রনিকস ও প্রযুক্তি খাত রপ্তানিতে পোশাকশিল্পকেও ওভারটেক করবে। এখন আইসিটি বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করছে, যা হয়তো দু-তিন বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। সমুদ্রে আমাদের ফিশিং নিয়ে কাজ করতে হবে। সেখানে যে পরিমাণ মাছ ধরা হচ্ছে ভালো প্রযুক্তি পেলে সেটা আরও অনেক বেশি হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সমুদ্রখাতে অনেক সেক্টর রয়েছে। তবে আমাদের এখনই মেরিটাইম শিপিংসহ বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের বন্দর আছে, সেখানে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। দেশীয় শিল্পের অধিকাংশ অর্থই চলে যাচ্ছে সড়ক দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়ায়। কারখানা থেকে পণ্য বন্দর পর্যন্ত নিতে একটা বড় খরচ হচ্ছে সেটা কেউ দেখে না, সেটাও হিসাবের মধ্যে আনতে হবে। জাহাজ-শিল্পের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে, আধুনিক মাছ ধরার ট্রলার হলে গভীর সমুদ্রের বড় মাছগুলো পাওয়া যাবে। সেখানেও রপ্তানি আয়ের বড় সম্ভাবনা রয়েছে।