বিশেষ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম বন্দরের ভিতর কন্টেইনার জট কমাতে অবশেষে দ্বিগুণ হারে মাশুল আদায় শুরু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ৯ মার্চ থেকে বাড়তি মাশুল আদায় শুরু হলেও তাতে খুব বেশি সুফল এখনো পর্যন্ত মিলেনি।এই অবস্থায় রমজানের আগে ভোগ্যপণ্য নিয়ে বড় জটিলতায় পড়ার শঙ্কা তৈরী হয়েছে।
কন্টেইনার দ্রুত ডেলিভারির জন্য জরিমানা হিসেবে এই বাড়তি মাশুল আদায় করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত কয়েকদিনে কন্টেইনার ডেলিভারি আশাব্যঞ্জক নয়। জরিমানা আরোপের পরদিন ৯ মার্চ কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছে ৪ হাজার ৬শ ৩৮ একক। ১০ মার্চ হয়েছে ৪ হাজার ৪০২ একক। জরিমানা আরোপের আগে ৮ মার্চ ডেলিভারি হয়েছে ৩ হাজার ১১৬ একক; ৭ মার্চ ছিল ৩ হাজার ৩৩৬০ একক। আপাত দৃষ্টিতে ডেলিভারি বাড়ছে মনে হলেও বন্দর থেকে স্বাভাবিক কর্মদিবসে ৪ হাজার ২শ একক কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। ফলে জরিমানা আরোপের পর কন্টেইনার ডেলিভারি বাড়েনি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা শিপিং এক্সপ্রেসকে বলছেন, আমরা দুইদফা জরিমানা আরোপের সময়সীমা বাড়িয়েছি। কিন্তু যেভাবে আশা করেছিলাম তার কিছুই হয়নি। কয়েক একক ডেলিভারি বৃদ্ধি জট পরিস্থিতি উন্নতির কোন লক্ষন নয়। এমনিতেই এখন কন্টেইনার জাহাজের জট বেড়েছে; ফলে রমজান পর্যন্ত কোন ছাড় দিবো না।
প্রাথমিক পর্যায়ে দ্বিগুণ হারে পেনাল রেন্ট আদায় হলেও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে নিয়ম অনুযায়ী চার গুণ পেনাল রেন্ট আদায়ের চিন্তা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সে ক্ষেত্রে কন্টেইনার প্রতি চার্জের হার হবে ২৪ এবং ৪৮ মার্কিন ডলার আরোপের চিন্তা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, জাহাজ এবং কন্টেইনার জট এড়াতে শেষ পর্যন্ত ৯ মার্চ থেকে স্বাভাবিক ভাড়ার দ্বিগুণ হারে জরিমানা মাশুল শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এখন থেকে কন্টেইনার বন্দরের ইয়ার্ডে রাখা হলেই প্রতিদিন ৬ থেকে ১২ মার্কিন ডলার জরিমানা গুনতে হবে আমদানিকারককে। আর ১১ দিনের বেশি থাকলে সেই হার হবে দ্বিগুণ। রমজান উপলক্ষে আমদানিকৃত পণ্য খালাস না করে ইয়ার্ডে ফেলে রাখায় বন্দর কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে দেশের বাজারে বাড়ানো হচ্ছে সব ধরনের ভোগ্য পণ্যের দাম। পণ্য সরবরাহেও ঘাটতির অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরে স্তূপ জমেছে আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্যের।
প্রতি বছরই রমজান শুরুর অন্তত চার মাস আগে থেকে শুরু হয় ভোগ্যপণ্য আমদানি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ব্যবসায়ীরা আমদানিকৃত পণ্য খালাস না করে বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে রেখে দিয়েছেন। এ অবস্থায় শঙ্কা দেখা দিয়েছে জাহাজ এবং কন্টেইনার জটের।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিকল্পনা-প্রশাসন) মোহাম্মদ জাফর আলম বলেন, ভেতরে কন্টেইনার রাখাটা ব্যয় সাশ্রয়ী ও নিরাপদ এ সুযোগ আর নেই। আমরা পরবর্তীতে কঠোর পদক্ষেপের দিকে যাব।
জাহাজ ও কন্টেইনার জট এড়াতে আমদানিকৃত পণ্য দ্রুত খালাস করতে ব্যবসায়ীদের একাধিকবার অনুরোধ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতে অগ্রগতি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয় দ্বিগুণ হারে পেনাল রেন্ট আদায়। এখন থেকে ৪ দিন ফ্রি অবস্থানের পর পরবর্তী সাত দিনের প্রতিদিন ২০ ফুট কন্টেইনার জন্য ৬ মার্কিন ডলার এবং ৪০ ফুটের জন্য ১২ মার্কিন ডলার করে পরিশোধ করতে হবে। তারপরও ডেলিভারি নেয়া না হলে এই হার হবে ১২ এবং ২৪ মার্কিন ডলার।
তবে আমদানিকৃত পণ্য দ্রুত খালাস করে বাজারে নেয়ার ব্যবস্থা না হলেও আসন্ন রমজানে ভোগ্য পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে বন্দর এবং কাস্টমসহ অংশীজনদের সহযোগিতায় আমদানিকৃত পণ্য দ্রুত খালাসের আহ্বান জানান চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম।