ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় বোমা হামলা ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ শিপিং কর্পােরশেনের জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। হামলার পর জাহাজের ব্রীজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ায় পুরো জাহাজটি এখন চলাচল অযোগ্য হয়ে গেছে। হামলায় এক নিহত নাবিকসহ জীবিত ২৮ নাবিককে নিরাপদে উদ্ধার করে আনা হয়েছে। কিন্তু দেড়শ কোটি টাকা দামি জাহাজটি এখন পর্যন্ত কারো নিরাপত্তা হেফাজতে দেয়া হয়নি। ফলে জাহাজটি সেখানেই পড়ে আছে।
মেরিন ট্রাফিকের ট্র্যাকিংয়ে দেখা গেছে, ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটি এখন আউট অফ রেঞ্জ দেখাচ্ছে। তবে বিএসসি বলছে, যেহেতু জাহাজের রাডার নষ্ট হয়ে গেছে, সেখানে কোন নাবিক নেই। ফলে জাহাজটি আউট অফ রেঞ্জ দেখানাে স্বাভাবিক।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, বিএসসির গাফিলতির কারণেই জাহাজটি এত বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। ১৫০ কোটি টাকা মূল্যের জাহাজটি শুধু নিরাপদ জায়গায় টেনে নিতে টাগবোট খাতে প্রতিদিন ব্যয় হবে অন্তত ২০ হাজার ডলার। যে টাগবোট নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাবে সেটি প্রতিদিন ভাড়া দাবি করবে কমপক্ষে ২০ হাজার ডলার করে। নির্ধারিত গন্তব্যে এমভি বাংলার সমৃদ্ধিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার পর টাগবোটটি নিজের বন্দরে ফেরত আসা পর্যন্ত ভাড়া দাবি করবে। মেরামত বাবদ খরচ তো আছেই। সব মিলে ১৫০ কোটি টাকার জাহাজটির পেছনে ব্যয় হবে অন্তত ৫০ কোটি টাকা।
জাহাজটি রক্ষায় বিএসসির গাফিলতির অভিযোগ পুনরায় তুলে তিনি বলেন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন–রাশিয়ার সমুদ্র এলাকাকে যুদ্ধ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। আর জাহাজটি অলভিয়া বন্দরে গেছে ২২ ফেব্রুয়ারি। যুদ্ধ এলাকা ঘোষণার পর পরই জাহাজটিকে অলভিয়া বন্দরে যেতে নিষেধ করতে পারত বিএসসি। সেটা না করায় জাহাজটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একজন নাবিকের জীবনও গেছে। পাশাপাশি বিপুল নাবিকের জীবন ঝুঁকিতে পড়েছিল। এখন নাবিকরা নিরাপদে ফিরতে পারলেও জাহাজটি কবে নাগাদ ফিরবে তা নিশ্চিত নয়।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স এসোসিয়েশন সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, জাহাজটি বিএসসি মালিকানাধীন হলে সেটি তৃতীয় একটি পক্ষকে পরিচালনার ভাড়া দেয়া হয়েছে। চার্টার পার্টি বিধিমালা অনুযায়ী কোনও জাহাজ কোম্পানি তার জাহাজের নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধকবলিত এবং জলদস্যুপ্রবণ এলাকাতে জাহাজ গমনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। এক্ষেত্রে জাহাজ মালিক বিএসসির পক্ষ থেকে জাহাজটিকে যুদ্ধকবলিত এলাকায় কেন গমনের অনুমতি দিল। জাহাজ পরিচালনায় বিএসসির সার্বিক অব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের আজকে এই মৃত্যু ও নাবিকদের দুর্দশা দেখতে হয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় এমভি বাংলার সমৃদ্ধির চরম ক্ষতি হয়েছে।
শিপিং সংশ্লিষ্টদের মতে অপেশাদার লোক দিয়ে শিপিং সেক্টর চালালে এ পরিনতি হবে। এর দায় সম্পূর্ণ বি এস সি এর বানিজ্যিক বিভাগের উপর বর্তায়। প্রান ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ হানির দায়ে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা দরকার। যুদ্ধবিগ্রহ এলাকায় জাহাজ পাঠানোতে ব্যক্তিগত লাভের কারণ থাকতে পারে,এ বিষয় খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ শিপিং কর্পােরশেনের মহাব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন মুজিবুর রহমান বলছেন, আমরা ইতোমধ্যে জাহাজটির ক্ষতিপুরন আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ক্ষতি নিরুপনের পরই আদায় কার্যক্রম শুরু হবে।