তিন নৌবন্দর দিয়ে ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্য পরিবহনে তিন প্রতিবন্ধকতা

বিশেষ প্রতিনিধি
বাংলাদেশের তিনটি নৌ বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য পরিবহনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবে তিনটি প্রতিবন্ধকতা খুঁজে পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এসব প্রতিবন্ধকতা দুর না করলে এখনই তিন বন্দর ব্যবহারে সুফল মিলবে না বলে মত দিয়েছে এই সংক্রান্ত কমিটি। তিন নৌ বন্দর হচ্ছে সরকারী পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল, নারায়নগঞ্জ নৌ বন্দর এবং বেসরকারী মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর নৌ বন্দর। এই বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পরীক্ষামূলক ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্য পরিবহনের প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন এক চিঠিতে এ তিন বন্দরে পরীক্ষামূলক ট্রান্সশিপমেন্ট পরিচালনার অনুমতি চেয়েছিল।বিষয়টি যাচাই করে ট্রানশিপমেন্ট পরিচালনায় নিয়ে মতামত দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
চিঠিতে ট্রান্সশিপমেন্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে তিন ধরনের প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে রাজস্ব বোর্ড। এতে বলা হয়, প্রথমত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের ব্যস্ততম সড়ক অতিরিক্ত পণ্যের ভার বহনের উপযুক্ত নয়। দ্বিতীয়ত, বিআইডব্লিউটিএ’র অধীনে ট্রানজিট অথবা ট্রানশিপমেন্ট বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) নেই। তৃতীয়ত, তিনটি টার্মিনালের সক্ষমতা সেই পর্যায়ে পৌঁছেনি।
চিঠিতে বলা হয়, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত হলে ও নারায়নগঞ্জ বন্দর ও তিনটি সড়কের মান উন্নত করে অতিরিক্ত ভার বহনের পরিবেশ তৈরি হলে পরীক্ষামূলক ট্রান্সশিপমেন্ট পরিচালনার অনুমতি দেয়া সমীচীন হবে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মনে করে।
তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিক কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে এক কর্মকর্তা শিপিং এক্সপ্রেসকে বলছেন, এসব প্রতিবন্ধকতা দুর না করে বিদ্যমান অবস্থায় ট্রান্সশিপমেন্ট দেয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে; সুফল মিলবে না।
অপরদিকে বিআইডব্লিউটিএ এ বিষয়ে সক্ষমতা জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মত দিতে যাচ্ছে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ে।
সূত্র জানায়, ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী হলদিয়া বা কলকাতা থেকে নৌপথে পণ্য ঢাকার পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল, নারায়ণগঞ্জ বন্দর ও মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরে সামিট অ্যালায়েন্স কনটেইনার টার্মিনালে (এসআইপিএল) আসবে। সেখান থেকে ট্রাক বা লরিতে সড়কপথে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা যাবে। ট্রায়াল রানে রড (টিএমটি বার), খাদ্যশস্য, ভোজ্যতেল, আদা ও সিমেন্ট কনটেইনারে ভরে পরিবহন করা হবে। তিন বন্দরে পৃথক তিন সময়ে এসব ট্রায়াল রান পরিচালিত হবে। তবে কবে কোনো পথে ট্রায়াল রান হবে তা পরে জানাবে বলে বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশন চিঠি দিয়েছে।
নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় বর্তমানে আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্য পরিবহন করছে ভারত। কলকাতা থেকে নৌপথে পণ্য এসে আশুগঞ্জ বন্দরে নামিয়ে সড়কপথে ত্রিপুরা রাজ্যে যাচ্ছে। আশুগঞ্জ নদীবন্দরে পর্যাপ্ত অবকাঠামো সুবিধা না থাকার কারণ দেখিয়ে এবার পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল, নারায়ণগঞ্জ বন্দর, সামিট এলায়েন্ট কনটেইনার টার্মিনাল দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রান্সশিপমেন্ট পরিচালনার অনুমতি চেয়েছে দেশটি।এর আগে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারসংক্রান্ত আরেকটি চুক্তির আওতায় জুলাইয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রান্সশিপমেন্ট পরিচালনা করে ভারত। ওই ট্রান্সশিপমেন্টে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস করে সড়কপথে আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে আসাম ও ত্রিপুরা গেছে। পরীক্ষামূলক ওই ট্রান্সশিপমেন্টেও ফি আদায় করেছে বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, নৌ প্রটোকল চুক্তিতে পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল ও নারায়ণগঞ্জ বন্দর পোর্ট অব কলভুক্ত রয়েছে। মুক্তারপুরে সামিট অ্যালায়েন্স কনটেইনার টার্মিনালকে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের সম্প্রসারিত অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।