Portsবাংলা নিউজ

জাহাজজটের কারণে কলম্বো বন্দর এড়িয়ে চলছে বিদেশি শিপিং লাইনগুলো

বিশেষ প্রতিনিধি
জাহাজজটের ধকল থেকে বাঁচতে শ্রীলংকার কলম্বো সমুদ্রবন্দর এড়িয়ে চলছে বিদেশি শিপিং লাইনগুলো। কলম্বোর বদলে ভারতের কয়েকটি বন্দর সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে ইউরোপ-আমেরিকায় পণ্য পরিবহন করছে জাহাজ পরিচালনাকারীরা। এরফলে কলম্বো বন্দরে ৫ দিনের জাহাজজট এড়িয়ে কমসময়ে পণ্য পরিবহন নিশ্চিত হচ্ছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশের একটি শিপিং লাইনের শীর্ষ কর্মকর্তা শিপিং এক্সপ্রেসকে বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রওনা দিয়ে ‘এসওএল স্ট্রেইটস’ জাহাজটি ২৪ নভেম্বর কলম্বো বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। গতকাল ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেটি জেটিতে ভিড়তে পারেনি। অর্থ্যাৎ ১০ দিন বহির্নোঙরে থাকার পরও জেটিতে ভিড়তে পারেনি জাহাজটি। জাহাজটিতে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের ১১শ একক রপ্তানি পণ্য ছিল। আজ ৪ ডিসেম্বর জাহাজটি জেটিতে ভিড়তে পারলেও এসব পণ্য কখন নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছতে তা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা।  কারণ ইতােমধ্যে অনেকগুলো মাদার ভ্যাসেল শিডিউল মিস করেছি আমরা।

আরেকটি শিপিং লাইনের কর্মকর্তা বলছেন, কলম্বো বন্দরের জাহাজজট এড়াতে আমরা মায়ের্কস লাইনের একাধিক জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে ভারতের কাটুপল্লী বন্দরের রাখছি। সেখান থেকে ইউরোপ-আমেরিকাগামি মাদারভ্যাসেলে তুলে দিচ্ছি। এতে প্রচুর সময় সাশ্রয় হচ্ছে। কলম্বো বন্দরে জাহাজজট স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই আমরা রুট ঠিক করছি।

কলম্বোভিত্তিক জাহাজের মেইন লাইন অপারেটর কর্মকর্তা বলছেন, কলম্বো বন্দরে এখন ৫ দিনের জাহাজজট। তাই এমএসসির জাহাজকে আমরা এখন সিঙ্গাপুর হয়ে ইউরোপ-আমেরিকার গন্তব্যে পাঠাচ্ছি। এটি ছাড়া আমাদের কাছে ভালো কোন উপায় নেই।

উল্লেখ্য, শ্রীলংকার কলম্বো সমুদ্রবন্দরে  ‌৫০ হাজার একক পণ্যভর্তি কন্টেইনার জমে আছে। এরমধ্যে বাংলাদেশের রয়েছে বিপুল পণ্যভর্তি কন্টেইনার; আছে ভারতের পণ্যও । এতে দুইদেশের ব্যবসায়ীরা কলম্বো বন্দর ব্যবহার করতে গিয়ে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। কভিড-১৯ মহামারির কারণে কলম্বো বন্দরের আশপাশে লকডাউন দেয়ায় বন্দরে অন্তত ৩০ শতাংশ শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে; এর প্রভাবে পুরো বন্দরের জাহাজ ভিড়ানো; উঠানামা এবং ডেলিভারিতে পড়েছে। এরফলে কলম্বো বন্দরে একটি ফিডার জাহাজ ভিড়তে বহির্নোঙরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে সাতদিনের বেশি, আর বড় মাদার ভ্যাসেল ভিড়তে সময় লাগছে দুদিন।

কলম্বো বন্দর কর্তৃপক্ষ ধারনা করছে, বন্দরে যে জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো আট সপ্তাহ লাগতে পারে। ফলে এই বন্দর ব্যবহারকারী বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি আরো বাড়বে। এই কারণে ভারতের ব্যবসায়ীরা কলম্বোর বদলে ভারতের চেন্নাই, মুম্বাই বন্দর ব্যবহার করে পণ্য বিদেশের গন্তব্যে পাঠাচ্ছেন।

শিপার্স একাডেমি অফ কলম্বোর চিফ এক্সিকিউটিভ রোহান মাসাকোরালা বলছেন, বন্দর শ্রমিক সংকটের কারণে কলম্বো বন্দরে উৎপাদনশীলতা প্রায় ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এতে একটি ফিডার জাহাজ ভিড়তে সাতদিনের বেশি লাগছে; মাদার ভ্যাসেল ভিড়তে সময় লাগছে ফলে দুদিনের বেশি। এতে ক্রেনের উৎপাদনশীলতা এবং আন্তঃ টার্মিনাল ট্রাকে পণ্য স্থানান্তরে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বলছেন, বন্দরে ৫০ হাজার একক পণ্যভর্তি কন্টেইনার জমে আছে। শিডিউল রক্ষা করতে অনেক ব্যবসায়ীকে পণ্য ইউরোপ-আমেরিকায় উড়োজাহাজে পাঠাতে হয়েছে।  যে বিশাল জট সৃষ্টি হয়েছে সেটি পরিষ্কার করতে ছয়-আট সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button