জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৯ জাহাজ ভিড়েছে মাতারবাড়ী জেটিতে

মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মান শেষে চালু হবে ২০২৫ সালের মাঝামাঝিতে; তার আগেই সেখানে নির্মিত দুটি জেটিতে পণ্যভর্তি জাহাজ ভিড়ানো শুরু হয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ মাসে ৫৯টি পণ্যবাহি জাহাজ ভিড়েছে সেই জেটিতে। সবগুলো জাহাজই এসেছে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মানসামগ্রী নিয়ে।
মাতারবাড়ীতে জাহাজ ভিড়ানোর মূল সমন্বয়কারী এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সহকারী হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন আতাউল হাকিম সিদ্দিকী বলেন, প্রথমদিকে একটি জেটি থাকায় জাহাজের সংখ্যা কম ছিল; দুটি জেটি আসায় জাহাজের সংখ্যাও অনেক বেড়ে যায়। মাত্র এক বছরেই আমরা ৪৯টি পণ্যবাহি জাহাজ জেটিতে ভিড়ার রেকর্ড করেছিলাম। আর জানুয়ারিতে ১০ টি পণ্যবাহি জাহাজ জেটিতে ভিড়েছে। এখন শুধুমাত্র কয়লাবিদ্যুত কেন্দ্রের নির্মান সামগ্রী বোঝাই জাহাজই জেটিতে ভিড়ছে। ভবিষ্যতে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে এখানে দেশের সবচে বড় জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারবে।
এরপর থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ১৭টি বাণিজ্যিক জাহাজ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণসামগ্রী নিয়ে জেটিতে ভিড়েছিল। তখন সেখানে জেটি ছিল একটি। ২০২১ সালের ১৫ জুলাই নতুন আরেকটি জেটি চালু হয়। এরপর একসাথে দুটি জেটিতে দুই জাহাজ ভিড়তে শুরু করে। বছর শেষে মোট ৪৯ জাহাজ ভিড়ার রেকর্ড করে মাতারবাড়ী।
তিনি আশা করেন, ২০২২ সালে আমরা মোট ১০০ জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের আশা করছি; এই পরিমান জাহাজ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয়ও সরাসরি দ্বিগুণ হবে।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে প্রথম পণ্যবাহি জাহাজ ভিড়ে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বরে। তখন জাহাজ প্রবেশের নির্মিত চ্যানেল বা সুমদ্রপথ দিয়ে প্রথমবার প্রবেশ করেছিল বাণিজ্যিক জাহাজ ‘ভেনাস ট্রায়াম্প’। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছিল মাতারবাড়ী চ্যানেল। মূলত মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মিত হেভি লিফট বা ভারী কার্গো নামানোর জন্য এই জেটি ব্যবহৃত হচ্ছিল।
জানা গেছে,কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আগে প্রস্তুত হয়েছে আড়াই শ মিটার প্রস্থ, ১৮ মিটার গভীরতা এবং ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল। এই চ্যানেল বা প্রবেশপথ দিয়েই বঙ্গোপসাগর থেকে জাহাজ বন্দর জেটিতে প্রবেশ করছে। গভীর সাগর থেকে জাহাজগুলো চ্যানেল দিয়ে জেটিতে প্রবেশের জন্য বসানো হয়েছে পথনির্দেশক বয়। প্রবেশ চ্যানেলের সক্ষমতা থাকলেও এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৯ মিটার গভীরতা বা ড্রাফট এবং ১৩৫ মিটার পর্যন্ত জাহাজ জেটিতে প্রবেশ করেছে।
জানতে চাইলে শিপিং কম্পানি ক্রাউন নেভিগেশন কম্পানির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাহেদ সারোয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হওয়াটা দেশের অর্থনীতির জন্য বিশাল সৌভাগ্য বয়ে আনবে। ২০২৫ সালের আগেই সেখানে টার্মিনাল-জেটি তৈরী হয়ে যাবে কিন্তু সেই বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনের সুযোগ এর আগে তৈরী হবে বলে আমার মনে হয় না। ফলে মাতারবাড়ী দিয়ে সরাসরি ইউরোপ-আমেরিকায় পণ্য পরিবহনের সুযোগ প্রথমদিকে ভোগান্তি হতে পারে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার দুই লেনের মহাসড়ক এমনিতেই খুবই সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে মাতারবাড়ী থেকে একটি কন্টেইনার এই সড়কে আসা মানেই বাড়তি চাপ তৈরী করা; যা এই সড়ক দিয়ে সামাল দেয়া কোনভাবেই সম্ভব হবে না। ফলে মাতারবাড়ীর সাথে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সড়ক-রেল পরিবহন নিরবচিছন্ন করতে হবে ২০২৫ সালের মধ্যেই।