বিশেষ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্য সড়কপথে ভারতের সাতরাজ্যে নেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে খাগড়াছড়ির রামগড়ে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১। এই সেতুটি বাংলাদেশের রামগড়ের মহামুনি আর ভারতের ত্রিপুরার সাবরুমকে সংযুক্ত করেছে। ফলে চট্গ্রাম বন্দর থেকে পণ্য সড়কপথে খুব সহজেই ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরামসহ পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে সরাসরি পৌঁছতে পারবে।
আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে উদ্বোধন হতে পারে এই সেতু। সেদিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি সেতুটির আনুষ্ঠানিক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই সেতুর মাধ্যমে দুইদেশের সড়কপথের বানিজ্যে নতুন মাইলফলক হবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাগড়াছড়ির রামগড়ে নির্মানাধীন রামগড় স্থলবন্দর বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ বাড়াবে। সম্প্রসারিত হবে এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য। এটি হবে দেশের ২৩তম পূর্ণাঙ্গ স্থল বন্দর। রামগড় স্থল বন্দর এই অঞ্চলের অধিবাসীদের অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি সর্বত্র কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করবে, বৈদেশিক বাণিজ্যে তথা পণ্য ও সেবার অবাধ প্রবাহ, বিনিয়োগে আন্তর্জাতিককরণ, বাজার সম্প্রসারণ ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে এগিয়ে যাবে দেশ, সফল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে যুক্ত হবে সমৃদ্ধির এক নতুন অধ্যায়।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি মনে করেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরকে পূর্ব ভারতের কমপক্ষে পাঁচ কোটি মানুষ ব্যবহার করলে প্রচুর রাজস্ব আয় হবে। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়বে। উত্তর-পূর্ব ভারতের পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য কলকাতা বন্দরে যেতে ১২শ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। বিপরিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সাত রাজ্যের দূরত্ব অনেক কম।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ‘নেইবারহুড ফাস্ট’ ও ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’র প্রভার বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির বীজ নিহিত আছে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সহযোগিতার ওপরই। ‘সেভেন সিস্টার্স’ হিসাবে পরিচিত এই অঞ্চলের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েস অ্যান্ড ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানিশ চন্দ্র আগারভাগ ইনপাকন প্রাইভেট লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে ৮২.৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে রামগড়ের মহামুনিতে ২৮৬ একর জমির ওপর ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪.৮০ মিটার প্রস্থের আন্তর্জাতিক মানের মৈত্রী সেতুটি গত ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে নির্মাণ কাজ শুরু করে দীর্ঘ ৩ বছর পর গত জানুয়ারিতে নির্মাণ কাজ শেষ করে। সেতুটির ১২টি পিলারের মধ্যে বাংলাদেশ অংশে নির্মাণ করা হয়েছে আটটি এবং ভারতের অংশে চারটি। যাতে স্প্যান রয়েছে ১১টি। এর সাতটি বাংলাদেশ অংশে ও ভারত অংশে চারটি।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে রামগড়-সাব্রুম স্থলবন্দর চালুর যৌথ সিদ্ধান্তের পর ২০১৫ সালের ৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নামে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির শিলান্যাস করেন। ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।