চট্টগ্রাম বন্দর জলসীমায় বিদেশি জাহাজে দস্যুতার ঘটনা একেবারে শুন্য

বিশেষ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম বন্দর জলসীমায় পণ্যবাহি বিদেশি জাহাজে দস্যুতার ঘটনা একেবারে শুন্যের কোঠায় নেমেছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রথম প্রান্তিকে কোন দস্যুতার ঘটনা ঘটেনি। অথচ ২০২০ সালে একসাথে ৫টি দস্যুতার ঘটনা রেকর্ড করায় চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী বিদেশি জাহাজের দেশিয় এজেন্ট এবং জাহাজ মালিকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছিল। নতুন বছরে দস্যুতা বা পাইরেসির ঘটনা শুন্যে নেমে আসায় উদ্বেগ কমেছে কিন্তু একেবারে স্বস্তি মিলেনি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম. শাহজাহান শিপিং এক্সপ্রেসকে বলছেন, জানুয়ারিতে আমি চট্টগ্রাম বন্দরে যোগ দেয়ার পর পাইরেসি রিপোর্ট দেখে একটি সমন্বিত বৈঠক ডাকি। সেখানে কোস্টগার্ড যেহেতু মুল কাজটি করে তাই তাদের সাথে পৃথকভাবে বৈঠক করে পরিকল্পনা করি এবং বাস্তবায়নে জোর দিই। এরপর থেকেই মুলত সফলতা আসতে শুরু করে।
তিনি বলছেন, এখনকার রিপোর্ট দেখে আমরা থেমে যাব না। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আমরা ভিটিএমআইএস এর মাধ্যমে তদারকি জোরদার করেছি। কুতুবদিয়া পর্যন্ত এর পরিসর বাড়ানো হয়েছে। যেকান পরিস্থিতিতে এই অর্জন ধরে রাখতে হবে।
বাণিজ্যিক জাহাজে সংঘটিত সশস্ত্র ডাকাতি, দস্যুতা ও চুরি প্রতিরোধে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংগঠন রিক্যাপ ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই রিপোর্টে চট্টগ্রাম বন্দর জলসীমায় কোন দস্যুতার ঘটনা ঘটেনি। আর একই সময়ে সবচেে বেশি দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে সিঙ্গাপুর-মালাক্কা প্রনালীতে; ৭টি।ইন্দোনেশিয়াতে ৫টি, ফিলিপাইনসে ২টি, ভিয়েতনামে ২টি এবং ভারতে ঘটেছে ১টি। অবশ্য ২০২০ সালের রিক্যাপের বার্ষিক প্রতিবেদনে ৫টি দস্যুতার ঘটনা রেকর্ড করেছিল সংগঠনটি। সে হিসেবে এবার কোন দস্যুতা নেই।
রিক্যাপ প্রতিবেদনমতে, ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে সর্বমোট ১৭টি ঘটনা ঘটেছে।আর ২০২০ সালে প্রথম প্রান্তিকে ঘটেছিল ২৮টি। সে হিসেবে ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে দস্যুতার ঘটনা ৩৯ শতাংশ কমেছে। দস্যুতার ঘটনা কমে যাওয়াকে সুখবর হিসেবেই দেখছে প্রতিষ্ঠানটি। আর দস্যুতা কমায় বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশন পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলছেন, বিশ্ব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশ জলসীমায় জাহাজে যেসব ঘটনা ঘটত সেগুলো একেবারেই নগণ্য। এমন ছোট্ট ঘটনায়ও আমাদের বিপাকে পড়তে হতো। বন্দর, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সমন্বিত প্রয়াসে এখন ছোট্ট চুরির ঘটনায়ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এতে নিরাপদ বন্দর হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল হবে সন্দেহ নেই। তবে এটিকে ধরে রাখার কোন বিকল্প নেই।
রিক্যাপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় বিগত ১২ বছরের মধ্যে ২০১৯ সালেই কেবল দস্যুতার ঘটনা শূন্যে নেমেছে। এর আগে ২০১০ সালে সর্বোচ্চ ২১টি, ২০১১ সালে ১৪টি, ২০১২ সালে ১২টি, ২০১৫ সালে ১০টি, ২০১৬ সালে একটি, ২০১৭ সালে ১১টি এবং ২০১৮ সালে ৯টি দস্যুতা-চুরির ঘটনা ঘটে।