চট্টগ্রাম বন্দরে দিনে দিনেই জেটিতে ভিড়বে চট্টগ্রাম-ইতালিগামি কন্টেইনার জাহাজ

চট্টগ্রাম-ইতালি রুটে চলাচলকারী প্রথম কন্টেইনার জাহাজ ‘সুঙ্গা চিতা’ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছবে ৫ ফেব্রুয়ারি। কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের সাথে মিল থাকলে জাহাজটি সেদিনই চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ভিড়ার সুযোগ পাবে।জাহাজটি আসার পথে প্রায় এক হাজার একক কন্টেইনার নিয়ে আসবে। এরমধ্যে সাত একক আমদানি কন্টেইনার’ রয়েছে। আর ফিরতি পথে প্রায় ১১শ একক রপ্তানি পণভর্তি কন্টেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়বে।এর মধ্যে ৯৮ শতাংশ তৈরি পোশাক এবং বাকি ২ শতাংশ হ্যান্ডিক্রাফট ও চামড়া, পাট জাতীয় পণ্য। পণ্যগুলো ইতালির রেভেনা বন্দরে পৌছানোর পর সেগুলো ক্রেতাদের চাহিদামতো ইউরোপের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌছে যাবে।
এরমধ্যদিয়ে চট্টগ্রাম-ইউরোপে সরাসরি জাহাজ চলাচলের সুযোগ তৈরী হলো। দেশের তৈরী পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ীরা এই উদ্যোগকে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যায়ার সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন। এর আগে, ‘কেপ ফ্লোরেস’ খালি কন্টেইনার নিয়ে ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল কিন্তু ফিরতি পথে এটি কোনো রপ্তানি পণ্য বহন করেনি।সেটি ছিল পরীক্ষামূলক যাত্রা। সেই যাত্রা সফলের পরই নিয়মিত চলাচল শুরু হয়েছে।
জানতে চাইলে ইতালিয়ান জাহাজ পরিচালনাকারী কম্পানির শিপিং এজেন্ট রিলায়েন্স শিপিং এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, ইতালিয়ান ক্রেতা মুলত এই সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেন। বিশ্বজুড়ে কন্টেইনার ভাড়া ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়ায়; ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোতে বড় ধরনের জট এড়াতে বিকল্প হিসেবে তিনি এই রুটে জাহাজ চলাচলের উদ্যোগ নেন। এর আগে তিনি চীন-ইতালি রুটে এই ধরনের জাহাজ চালিয়ে সফল হন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিদেশি সেই শিপিং কম্পানির পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম-ইতালি রুটে জাহাজ চলাচলের আবেদন পায়ার পর অত্যন্ত দ্রুততার সাথে অনুমোদন দেন। চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান নিজে বিষয়টি তদারকি করেন এবং দ্রুত অনুমোদন দেন।
রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলছেন, এই ধরনের উদ্যোগ চট্টগ্রাম বন্দরের এই প্রথম। তাদের আবেদন দেখেই আমার কাছে অসম্ভব এক সম্ভাবনাময় উদ্যোগ মনে হয়েছে।কারণ একটি জাহাজ যদি ১৬ দিনে ইতালি পৌঁছতে পারে তাহলে দেশের রপ্তানি পোশাক শিল্পের জন্য এরচেয়ে বড় সুখবর আর হতে পারে না। ফলে আমি নিজে তাদের দ্রুত সার্ভিস চালুর তাগাদা দিই। এখন আশা করছি জাহাজ বহির্নোঙরে আসা মাত্রই আমরা জেটিতে বার্থিং দিতে পারব।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম-ইতালি রুটে চলাচলের জন্য দুটি ফিডার কন্টেইনার জাহাজ ‘সু্ঙ্গা চিতা’ এবং ‘কেপ ফ্লােরেস’ জাহাজ ভাড়া করেছে ইতালিয়ান শিপিং কোম্পানি ক্যালিপসো কোম্পানি ডি নেভিগেশন এসপিএ। কিন্তু দুটি জাহাজের মধ্যে ‘কেপ ফ্লোরেস’ জাহাজটি মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী। যেটির গভীরতা ৮ দশমিক ৬৬ মিটার। কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা ১,২০০ একক। দৈর্ঘ্য ১৫৪ দশমিক ৪৭ মিটার এবং প্রস্থ ২৫ দশমিক ১৯ মিটার। একইসাথে লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী ৬ দশমিক ২ মিটার ড্রাফটের ‘সুঙ্গা চিতা’ জাহাজটি ১৪৮ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ২৩ মিটার প্রস্থ।
এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সালাম বলছেন, এই মুহুর্তে এটি আমাদের জন্য বড় সুখবর।এতে সময় অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে। ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে গিয়ে পণ্য উঠানামার ভোগান্তি কমবে। এখন শিপিং কম্পানি যদি ইতালি থেকে সড়কপথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পণ্য পরিবহনের উদ্যোগ নেয় তাহলে ব্যাপক সাড়া মিলবে।