চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৪ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে নেই জাহাজ ও কন্টেইনার জট

বিশেষ প্রতিনিধি
আগামীকাল ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দর দিবস। আজ থেকে ১৩৪ বছর আগে দেশের প্রথম এই সমুদ্রবন্দরটি প্রতিষ্ঠা পায়। প্রতিবছরই বেশ ঘটা করেই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আেয়াজন করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। থাকে মেজবান, আলোচনা, সম্মাননাসহ বিভিন্ন জমকালো অনুষ্ঠান। কিন্তু ২০২০ সালে কভিড মহামারির কারণে উদযাপিত হয়নি বন্দর দিবস। চলতি ২০২১ সালে বন্দর দিবসের কোন কর্মসূচি নেই চট্টগ্রাম বন্দরের।
দেশের এই প্রধান সমুদ্রবন্দর দিয়ে দেশের মোট আমদানি-রপ্তানির ৯২ শতাংশের বেশি পণ্য উঠানামা হয়েছে। ফলে দেশের মোট অর্থনীতি পরিচালিত হচ্ছে এই চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে। তাই যেকোন দুর্যোগ-মহামারিতে চট্টগ্রাম বন্দর সচল থাকার পর নির্ভরশীল দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর এক কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিকালীন চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকগণ দেশের সাপ্লাই চেইন নির্বিঘ্ন রাখার স্বার্থে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা সপ্তাহে সাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন। এর ফলেই কভিড-১৯ মহামারির লকডাউনের এই মুহুর্তে চট্টগ্রাম বন্দরে কোন জাহাজজট নেই; নেই কোন কন্টেইনার জট। এটি আমাদের সবার জন্য বড় সুখবর।
বন্দর চেয়ারম্যান বলছেন, ২০০৯ সালে প্রথম বারের মত চট্টগ্রাম বন্দর ১০০টি কন্টেইনার পোর্টের তালিকায় ৯৮তম অবস্থান নিয়ে নিজের স্বীকৃতি অর্জণ করে। মাত্র ১১ বছরে ৪০ ধাপ এগিয়ে ২০২০ সাথে চট্টগ্রাম বন্দর ৫৮তম অবস্থানে উন্নীত হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের এই অর্জন বর্তমান সরকারের চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নেরই প্রতিফলন। জাতীয় অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্ম শতবর্ষে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন স্বল্প-মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্প বাস্তবায়নে বন্দর কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর। তাছাড়া একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বন্দরের আধুনিকায়ন, যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মান ও নিউমুরিং ওভার ফ্লো ইয়ার্ড নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। ইতিমধ্যে পতেঙ্গাস্থ লালদিয়াচর এলাকায় বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ৫২ একর ভূমি উদ্বার করা হয়েছে। উক্ত এলাকায় বন্দর সুবিধাদি বৃদ্ধির বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলছেন, বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে শূন্য পাইরেসী (দস্যুতা), পরীক্ষমূলকভাবে ভারতের কলকাতা বন্দর হতে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য ট্রানজিট (পণ্য পরিবহন) চালু। সর্বোপরি ২০২০ সালে বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মূল্যায়নে পরিকল্পনা কমিশন চট্টগ্রাম বন্দরের নেতৃত্ব ও ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছে এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ব সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরকে অনূকরণীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে মন্তব্য করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের এসকল অর্জণের ভাগিদার বন্দরের সকল অংশীজনসহ সকল সরকারী ও বেসরকারি সংস্থা এবং সকল প্রতিষ্ঠান। সকলের সহায়তার বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষ কতৃজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে আগত জাহাজের সংখ্যা ছিল ৩৬৬টি, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬৯ একক, কার্গো হ্যান্ডলিং ১ কোটি ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪০২ টন। ২০২১ সালের মার্চ মাসে তা যথাক্রমে জাহাজের সংখ্যা ছিল ৩৭৬টি, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৬ একক, কার্গো হ্যান্ডলিং ১ কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার ৮১৮ টন। কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডিলিং এ প্রবৃদ্ধি প্রায় ৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং এ ২ দশমিক ৭ শতাংশ।