বিশেষ প্রতিনিধি
পদ্মা সেতুর ৪১টি স্প্যান বসানো শেষে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজ ‘তিয়ান-ই’। সেতুর স্প্যান জোড়া লাগানোর কাজে দক্ষ চীনের তৈরী এই জাহাজ প্রায় সাড়ে ৩ বছর পদ্মা সেতু প্রকল্পে নিয়োজিত ছিল। ৩ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন ওজনের এই ক্রেনের দাম আড়াই হাজার কোটি টাকা।
সাড়ে ছয় কিলোমিটার পদ্মাসেতু দৃশ্যমান হয়ার পর কাজ শেষ করে সেটি চীনের উদ্দেশে মাওয়া ছেড়েছে। এখন চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর অপেক্ষায় আছে; সেখানে চট্টগ্রাম কাস্টমসে শুল্কায়ন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম শেষে এটি সমুদ্রপথে হংকং হয়ে চীনে পৌঁছাবে। এরইমধ্যে বড় একটি মাদারভ্যাসেল বা জাহাজ আসবে ভাসমান ক্রেনটিকে চীন পর্যন্ত চালিয়ে নেয়ার জন্য। চট্টগ্রাম থেকে জাহাজটি চীন পৌঁছতে একমাসের বেশি সময় লাগবে।
জাহাজ পরিচালনাকারী এক শিপিং এজেন্ট শিপিং এক্সপ্রেসকে বলছেন, এমনিতেই চীন থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম পৌঁছতে সময় লাগে ১৫দিন; কিন্তু জাহাজটি যেহেতু নিজের ইঞ্জিনে চলবে না তাই পৌঁছতে সময় বেশি লাগবে। এছাড়া জাহাজটি ফিরতি পথে চট্টগ্রাম-সিঙ্গাপুর-হংকং-চীন হয়ে যাবে এজন্য মাসের বেশি সময় লাগবে।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বলছেন, ২০১৭ সালের মার্চ মাসে ক্রেনটি পদ্মা সেতু প্রকল্পে আনা হয়। সে বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম স্প্যান থেকে চলতি বছরের গত ১০ ডিসেম্বর সেতুর ৪২টি পিয়ারে ৪১টি স্প্যান বসানোর কাজ করে ক্রেনটি। এটি ব্যবহারে প্রতিমাসে খরচ পড়েছে ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ পদ্মা সেতু প্রকল্পে ক্রেনটি ব্যবহারে গত ৪৫ মাসে খরচ হয়েছে সাড়ে ১৩ কোটি টাকা।
তিনি জানান, গত সপ্তাহে ক্রেনটি চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে যাওয়ার জন্য মাওয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে থেকে সেটি হংকং হয়ে চীনে পাড়ি জমাবে। মাওয়া থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ক্রেনটির যাত্রা নিরাপত্তায় ছিল পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। সেখান থেকে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স শেষে বড় মাদার ভেসেলে সেটি হংকংয়ের উদ্দেশে রওনা হবে। এটি চীন পৌঁছাতে এক মাসেরও অধিক সময় লাগবে।
স্থানীয়রা বলছেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভাসমান ক্রেন ‘তিয়ান-ই’ যার মাধ্যমে পদ্মা সেতু সম্পন্ন হয়েছে। এই জাহাজটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে। সেতুর কাজে ব্যবহৃত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজ এটি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির চীন থেকে নিয়ে আসে।