বাংলা নিউজ

চট্টগ্রাম কাস্টমসেই পণ্যছাড় করতে সবচে বেশি সময় লাগে

আমদানি পণ্য খালাস করতে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় লাগে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে। এতে এখন পণ্য খালাস হতে সময় লাগে ১১ দিন ৬ ঘন্টা ২৩ মিনিট। আর স্থলবন্দরে পণ্য খালাসে সময় লাগে ১০ দিন আট ঘণ্টা ১১ মিনিট এবং ঢাকায় ৭ দিন ১১ ঘণ্টা ১৯ মিনিট সময় লাগে।
আমদানি পণ্য বন্দরে পণ্য পৌঁছার পর কাস্টমসে বিল অব এন্ট্রি জমা থেকে শুরু করে কাগজপত্র দাখিল, পণ্যের চালান পরীক্ষা-নিরীক্ষা, মূল্যায়ন, শুল্ক-কর পরিশোধ এবং পণ্য খালাস করে নিতে ছয়টি ধাপ সম্পন্ন করা হয়। আর এতেই এই বিপুল সময় লাগে।

গত সোমবার টাইম রিলিজ স্টাডি ২০২২ প্রকাশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ গবেষণায় চট্টগ্রাম, বেনাপোল ও ঢাকা কাস্টম হাউসে আমদানি পণ্য খালাস করতে কত সময় লাগে, তা প্রকাশ করা হয়। এ গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, আমদানিকারকের কাগজপত্র সংগ্রহ ও জমা অর্থাৎ শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শুরুর আগেই ৭২ থেকে ৭৮ শতাংশ সময় চলে যায়।
রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ‘টাইম রিলিজ স্টাডি (টিআরএস)-২০২২’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপনের সময় এসব তথ্য জানান টিআরএসের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল হাকিম। এ সময় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন- অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এতে সভাপতিত্ব করেন। সুইজারল্যান্ডের গ্লোবাল ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রোগ্রামের সহায়তায় এ গবেষণাটি করা হয়।

এতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বেনাপোল বন্দরের ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২১ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। অনুষ্ঠানে টিআরএসের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল হাকিম গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন।
গবেষণাপত্রে বলা হয়, বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রায় ১২ থেকে ২০ শতাংশ সময় ব্যয় করে এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সিসিএইচ, বিসিএইচ এবং ডিসিএইচের মাধ্যমে একটি পণ্যের সামগ্রিক কাস্টমস রিলিজ প্রক্রিয়ায় মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ সময় ব্যয় করে। এতে বলা হয়, তিনটি কাস্টমস পোর্টের মধ্যে ঢাকা কাস্টম হাউসের ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া, বেনপোল এবং চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের চেয়ে দ্রুত সম্পন্ন হয়।

২০২২ সালের গত মে মাসে ৮ হাজার ৮৬০টি বিল অব এন্ট্রি থেকে বাছাই করে ১ হাজার ২০৯টি বিল অব এন্ট্রি ব্যবহার করে এ গবেষণাটি করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এ গবেষণাটি ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন (ডব্লিউসিও) কর্তৃক অনুমোদিত।
প্রতিবেদনে কয়েক ধরনের পণ্যের চালান খালাস করতে কত সময় লাগে, তা দেখানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে উল্লিখিত তিন কাস্টম হাউসে গড়ে ১২ দিনের মতো সময় লাগে। এ ছাড়া পোশাকের কাঁচামাল ছাড়াতে ঢাকা কাস্টম হাউসে ৫ দিন এবং বেনাপোল ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ১০ দিন সময় লাগে। ওষুধ পণ্য ছাড়াতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ১০ দিন ৫ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে।

২০১৪ সালে শুধু চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের খালাস নিয়ে একটি সমীক্ষা করে এনবিআর। সেখানে বলা হয়, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়ে তখন একটি পণ্যের চালান খালাস করতে ১১ দিন ৯ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট সময় লাগত।

অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের শুল্কবিষয়ক কমিটির সদস্য শামীম আহমেদ বলেন, কেন এত সময় লাগে, এর সমাধান এনবিআর করবে বলে আশা করি। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজেদের ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী হওয়ায় সহজেই মালামাল ছাড়িয়ে নিতে পারে। তবে ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার অভাবের কথাও চিন্তা করতে হবে।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এনবিআরের সদস্য মাসুদ সাদিক। বক্তব্য দেন এনবিআর সদস্য আবদুল মান্নান শিকদার, জাকিয়া সুলতানা, কমিশনার আবদুল হাকিম প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button