বাংলা নিউজ

কোরিয়া-চীন-বাংলাদেশ কন্টেইনার সার্ভিস বন্ধ!

নিজস্ব প্রতিবেদক,
দক্ষিন কোরিয়ার বুসান বন্দরের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার জাহাজ সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে গেছে। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে কোরিয়া-চীন-বাংলাদেশ (কেসিবি) নাম দিয়ে সার্ভিসটি দেশে প্রথম চালু করেছিল কোরিয়ান শিপিং কম্পানি ‘হুন্দাই মার্চেন্ট মেরিন’। প্র্রথমদিকে বেশ সাড়াও পেয়েছিল কিন্তু কোরিয়া বন্দরে ভিড়তে গেলে গ্রাহককে দেয়া নির্ধারিত সময় রাখতে না পারায় রুট থেকে কোরিয়াকে বাদ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে নাম না পাল্টিয়ে সার্ভিসটি শুধুমাত্র চীন-বাংলাদেশ (সিবি) রুটে চলাচল করছে।

বন্ধের কারণ জানতে চাইলে ‘হুন্দাই মার্চেন্ট মেরিন’-এর দেশীয় শিপিং এজেন্ট কনটিনেন্টাল গ্রুপের এক কর্মকর্তা শিপিং এক্সপ্রেসকে বলেন, কোরিয়া থেকে চট্টগ্রামে প্রচুর কন্টেইনার বুকিং ছিল কিন্তু গ্রাহককে দেয়া ১৪ দিনের টাইমিং রাখতে না পারায় আমরা রুট থেকে কোরিয়াকে বাদ দিয়েছি। এখন সার্ভিসটি চলছে চীনের নিমবো বন্দর থেে চীনের সাংহাই বন্দর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর; সময় লাগছে ১৩দিন। আর ফিরতি পথে চট্টগ্রাম বন্দর-সিঙ্গাপুরবন্দর-নিমবো-সাংহাই বন্দর; সময় লাগছে ১৫ দিন।

এখন কোরিয়ান পণ্য কিভাবে আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোরিয়ান পণ্য সাংহাই থেকে চট্টগ্রাম আসছে। এই রুটে আমরা ৫টি জাহাজ চালাই; আর মাসে ৫টি জাহাজ ভিড়ে চট্টগ্রাম বন্দরে। আমাদের কাছে বাড়তি জাহাজ নেই, একইসাথে চীনের মতো চট্টগ্রাম বন্দরে উইনডো বার্থিং বা নির্ধারিত দিনে বার্থিংয়ের জন্য বরাদ্দ রাখার সুযোগ নেই। এই কারণে কোরিয়াকে বাদ দেয়া হয়েছে; কারণ গ্রাহকদের কাছে সেবাই আমাদের কাছে প্রধান, ব্যবসা নয়।

শিপিং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রথম পণ্যবাহী কন্টেইনার জাহাজ চলাচল শুরু হয়।  তখন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজটি দক্ষিণ কোরিয়ার ভুসান বন্দরে যাওয়ার সময় মাঝপথে সিঙ্গাপুর বন্দর; তাইওয়ানের কেউশিয়াং এবং চীনের সাংহাই বন্দরকে সংযুক্ত করতো। সেই সার্ভিসের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরের পরিবর্তে সরাসরি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার সুযোগ ছিল। গার্মেন্টশিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানিতে বিপুল সময় ও অর্থের সাশ্রয় হয়েছিল কিন্তু মাঝপথে সার্ভিস বন্ধ হওয়ায় সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল এই খাতের ব্যবসায়ীরা।

দক্ষিন কোরিয়ার অনারারি কনসাল ও পিএইচপি গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন বলছেন, চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসরি জাহাজ সার্ভিস চালু থাকলে ট্রানজিট পোর্টগুলোতে পণ্য নামাতে হবে না। আরেকটি জাহাজে তোলার ঝামেলাও নেই। এতে করে অবশ্যই ভাড়া ও সময় অনেক কম লাগবে। দেশের অর্থনীতিতে এটি বিশাল বড় অবদান রাখতো। কিন্তু সার্ভিসটি বন্ধ হওয়ায় আগের মতোই আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। আগের মতো কোরিয়া থেকে এইচ আর কয়েল ও জিংক আমদানি করতে হচ্ছে খোলা বা বাল্ক জাহাজেই।

শিপিং ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে কোরিয়া কিংবা তাইওয়ানের সরাসরি পণ্যবাহী কনটেইনার জাহাজ সার্ভিস চালু নেই। চীন ও কোরিয়া থেকে প্রচুর গার্মেন্ট মেশিনারিজ ও কাঁচামাল দেশে আসে। এসব পণ্য প্রথমে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরে নামে, সেখান থেকে আরেকটি জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে; কিন্তু সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরে এখন এসব পণ্য চট্টগ্রামমুখী জাহাজে তোলার আগে অন্তত ৩০ দিন বন্দরে পড়ে থাকছে। এতে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। কারণ গার্মেন্ট পণ্য উৎপাদনে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা থাকছে, এর ব্যতিক্রম হলে বিপুল খরচ করে বিমানে পাঠাতে হয় অথবা নির্দিষ্ট সময়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে হয় দাম কমিয়ে দেয় অথবা অর্ডার বাতিল করে দেয়।

জানা গেছে, ইয়াংওয়ান গ্রুপসহ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় ২০০ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ইপিজেডে বিনিয়োগ করেছে। কোরিয়ার আরো বিখ্যাত কম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশে তৈরি বেশ কিছু পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ডিউটি ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রদান করেছে। সরাসরি সার্ভিস থাকলে শিল্পায়ন বিনিয়োগ দ্রুত বাড়তো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button