৪০০ যাত্রী নিয়ে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যায়ার পথে মাঝপথে সাগরে আটকা পড়ে অবর্নণীয় দুর্ভোগে পড়েছেন পর্যটকরা। ১৪ ঘন্টা পর বৃহষ্পতিবার ভোর ৪টায় বঙ্গোসাগর থেকে উপকূলে এসে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন তারা। পর্যটকবাহি জাহাজটির নাম ‘কর্ণফুলী এক্সপ্রেস’ চট্টগ্রামভিত্তিক কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের প্রকৌশলী রশিদের মালিকানাধীন।
মুলত পুরনো জাহাজ জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করে চালানোর কারণেই বারবার এই দুর্ঘটনা ঘটছে। জাহাজটির সী ক্রসিং অনুমতি সঠিকভাবে করা হয়নি। এবারো দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় পুরনো ত্রুটিপূর্ণ জাহাজ দিয়ে যাত্রী পরিবহনের বিষয়টিই সামনে চলে এসেছে। এজন্য যান্ত্রিক ত্রুটিকেই প্রধান কারণ হিসেবে মনে করছেন যাত্রীরা।
২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার থেকে সরাসরি সেন্ট মার্টিন রুটে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের মালিকানাধীন জাহাজটির। উদ্বোধনের দিনই নাজিরারটেক পয়েন্টে চরে সজোরে ধাক্কা লেগে আটকা পড়েছিল জাহাজটি। তখন কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল, নাবিকের গতিপথ ভুলের কারণেই ওই ঘটনা ঘটে। ২০২১ সালের গত ২৭ ডিসেম্বরও জাহাজটি একইভাবে মাঝ সমুদ্রে বিকল হয়ে গিয়েছিল। এ ঘটনায় পর্যটকরা অভিযোগ জানালেও এর কোনো সুরহা হয়নি। আজ ৩০ ডিসেম্বর আবারো দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় কর্তৃপক্ষ আবারো বলছে, নাব্যতার কারণেই দুর্ঘটনা।
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্যসচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পে যারা জড়িত তাদের সবার উচিত পর্যটকদের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে কয়েকটা জাহাজ রয়েছে, যা সমুদ্রে চলাচলের উপযুক্ত নয়। ‘নদীর জাহাজ সমুদ্র অতিক্রম করার অনুমোদন দেয় কীভাবে প্রশাসন। সবকিছুতে শুভংকরের ফাঁকি যেন কক্সবাজারের পর্যটনশিল্প ঘিরে। কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে যত জাহাজ চলাচল করছে তার ফিটনেস ও সমুদ্রে চলাচলে উপযুক্ত কি না খতিয়ে দেখা জরুরি
উল্লেখ্য, দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন যেতে টেকনাফ থেকে পাঁচটি ও কক্সবাজার থেকে একটি জাহাজে প্রতি বছর লক্ষাধিক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যায়। তবে দিন দিন এই জাহাজ ভ্রমণ রীতিমতো দুর্ভোগ হয়ে উঠেছে। পর্যটকরা বলছেন, মঙ্গলবার কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার পথে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে কর্ণফুলী এক্সপ্রেসের। পরে এমবি বে-ওয়ান নামের জাহাজে তাদের সেন্ট মার্টিন নেয়া হয়। এরপর বুধবার বিকেল ৫টার দিকে সেন্ট মার্টিন থেকে এমবি বে-ওয়ানের মাধ্যমে ৬ শতাধিক পর্যটককে মাঝ সাগরে এনে তুলে দেয়া হয় কর্ণফুলী এক্সপ্রেসে। যদিও পর্যটকদের বলা হয়েছিল বে-ওয়ানে করে কক্সবাজার নেয়া হবে। তবে কর্ণফুলী জাহাজে ওঠার কিছুক্ষণ পরই আটকা পড়ে জাহাজটি। সেই যাত্রা শেষ হয় ভোর ৪টা ১২ মিনিটের দিকে জাহাজ কক্সবাজারের নুনিয়াছড়ার বিআইডব্লিউটিএর ঘাটে ভিড়লে। ১৩ ঘণ্টা সাগরে ভেসে থাকার সময়ে নানা বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগ পার করেছেন এসব যাত্রী।
রাজশাহী থেকে পরিবারের ১৭ জন নিয়ে সেন্ট মার্টিন গিয়েছিলেন সানজিদুল আলম। রাজশাহী ফেরত যাবেন, তার জন্য বাসের টিকিটও কেটেছিলেন। তিনি বলেন, ‘বেলা ২টার সময় সেন্ট মার্টিন থেকে লাইনে দাঁড় করানো হয় জাহাজে ওঠার জন্য। সে জাহাজ ছেড়েছে বিকেল ৫টায়। মাঝ সাগরে এনে আবার পরিবর্তন করে তোলা হলো কর্ণফুলীতে। তার কিছুদূর আসার পরই বলা হলো জাহাজ ডুবোচরে আটকেছে।
‘তাহলে তারা সঠিক টাইম মেইনটেইন করেনি। যার ফলে জোয়ার থেকে ভাটা হয়েছে। আমাদের বাসের টিকিট, ভোরবেলা কোথায় গিয়ে উঠব, সে টাকা কি তারা ফেরত দেবে। এসব দুর্ভোগ মানুষকে কক্সবাজারবিমুখ করবে।’
রাজধানীর একটি কলেজের শিক্ষার্থী নাজিয়া আক্তার বলেন, ‘বাবা-মায়ের সঙ্গে কক্সবাজার এসেছি। আজকে (বুধবার) সকালে গেলাম সেন্ট মার্টিন। পৌঁছানোর কথা ২টায়। পৌঁছালাম সাড়ে ৪টার দিকে। নেমে নাশতাও খেতে পারিনি, ৫টার দিকে জাহাজ ছেড়ে দিল।