কন্টেইনারে পণ্য পরিবহনের শীর্ষে মায়ের্সক লাইন ও সীল্যান্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক
কন্টেইনারে পণ্য পরিবহনে বিশ^সেরা মায়ের্সক লাইন চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহনেও শীর্ষস্থান দখলে রেখেছে অন্তত ১০ বছর ধরে। ড্যানিশ কম্পানি মায়ের্সক গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান বিশ^জুড়ে তিনটি অঞ্চল ভাগ হয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন করছে। মায়ের্সক লাইন ও সীল্যান্ড এবং সাফমেরিন-ওই তিনটি কম্পানিই চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্য পরিবহনের প্রায় ২৪ শতাংশ এবং রপ্তানি পণ্য পরিবহনের ২৩ শতাংশ পরিবহন করছে। বিশে^র বিভিন্ন বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনারে আমদানি পণ্য পরিবহনের শীর্ষে আছে মায়ের্সক লাইন; আর রপ্তানিতে শীর্ষে আছে সী ল্যান্ড।
জাহাজের মেইন লাইন অপারেটর (এমএলও) এর ২০২০ সালের জানুয়ারি-জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
ওই সময়ের মধ্যে শীর্ষ তালিকায় আমদানিতে দ্বিতীয় স্থানে আছে চীনভিত্তিক কসকো শিপিং প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ, তৃতীয়স্থানে আছে সুইস-ইতালিয়ান মেডিটেরানিয়ান শিপিং কম্পানি (এমএসসি) প্রায় ৮ শতাংশ, চতুর্থস্থানে আছে হংকংভিত্তিক ওরিয়েন্ট ওভারসিস কন্টেইনার লাইন (ওওসিএল) এবং পঞ্চম স্থানে আছে সিঙ্গাপুর-জাপানভিত্তিক ওশান নেটওয়ার্ক এক্সপ্রেস (ওয়ান)।
আর তালিকা অনুযায়ী রপ্তানিতে দ্বিতীয় স্থানে আছে ওয়ান লাইন সাড়ে ১১ শতাংশ; তৃতীয় স্থানে আছে জার্মানভিত্তিক হ্যাপাগ-লয়েড পৌনে ১১ শতাংশ, চতুর্থ স্থানে এমএসসি পৌনে ১০ শতাংশ এবং পঞ্চমস্থানে ফ্রান্সের সিএমএ ৯ শতাংশ।
জানতে চাইলে মায়ের্সক লাইনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা শিপিং এক্সপ্রেসকে বলেন, বিশে^র শীর্ষস্থানীয় ক্রেতারা বছরের শুরুতে তাদের পণ্য পরিবহনের জন্য দরপত্র ডাকে; আমাদের সার্ভিস, ভাড়া, কানেকটিভিটি এবং কমপ্লায়েন্স সুবিধার কারণে তারা আমাদেরকেই নির্বাচিত করে। ফলে বছরের শুরুতে আমরা জেনে যাই কী পরিমান পণ্য রপ্তানি করবো। এছাড়া বিদেশি ক্রেতাদেরকে এখন আমরা গার্মেন্ট কারখানা চত্বর থেকে পণ্য বুঝে নিয়ে বিদেশি ক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছানোর দায়িত্ব নিচ্ছি। আমাদের জাহাজ সার্ভিস আছে, কন্টেইনার লাইন আছে, বাংলাদেশের সব বন্দরে সার্ভিস আছে ফলে অন্য শিপিং লাইনের চেয়ে আমরা একধাপ এগিয়ে আছি।
আর আমদানির ক্ষেত্রে বছরের শুরুতে শিপিং কম্পানি বাছাই করার কোন সুযোগ নেই। ফলে জাহাজ ভাড়া, কন্টেইনার ভাড়া, শিপিং সার্ভিস, গ্রাহকের পছন্দ সব নিয়ে জাহাজ কম্পানির মধ্যে চলে তীব্র প্রতিযোগিতা। আমদানিতে এগিয়ে থাকার দুটি কারণ বলছেন তানিম শাহরিয়ার। সেগুলো হচ্ছে, আমদানি পণ্য আনার জন্য গ্রাহকদের আমরা মাল্টি অপশন রেখেছি। আমাদের সরাসরি সার্ভিসে দ্রুত আনার জন্য বাড়তি ভাড়া, আবার একাধিক বন্দরে ঘুরে আসার জন্য কম ভাড়া দিচ্ছি; গ্রাহক তার পছন্দ বেছে নিচ্ছেন। আর আমাদের কাছে অনটাইম সার্ভিস ছাড়াও কোন হিডেন চার্জ নেই। যা ঘোষণা আছে তাই আদায় করি। ফলে গ্রাহক আগে থেকেই তার পরিবহন খরচ ঠিক করে নিতে পারছেন।
জাহাজের মেইন লাইন অপারেটর (এমএলও) হিসাবে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০টি শিপিং কম্পানি কন্টেইনার জাহাজ পরিচালনা করছে। প্রায় ৮৫টি কন্টেইনার জাহাজ দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহন করছে। ওই জাহাজ কম্পানিগুলোই দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দরে ২০১৯ সালে ২৯ লাখ একক কন্টেইনার পরিবহন করেছে; আয় করছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এই ব্যবসা ধরতে বিশ^ সেরা কম্পানিগুলোর মধ্যে চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা; ব্যবসা নিজেদের কব্জায় আনতে চলছে রীতিমতো ‘যুদ্ধ’।
মায়ের্সক লাইনের মার্কেট শেয়ার সবচে বেশি হলেও বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে টিকে আছে? জানতে চাইলে পণ্য রপ্তানিতে তৃতীয় স্থানে থাকা হ্যাপাগ-লয়েডস এর দেশিয় এজেন্ট জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের এসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মুনতাসির রুবাইয়াত বলছেন, প্রত্যেক ফিডার অপারেটরের নিজস্ব বিজনেস কৌশল আছে বলেই জায়ান্টদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে রয়েছে। যেমন-আমরা ইউরোপ-আমেরিকা-কানাডাতে পণ্য পরিবহনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি; সেখানে বিশেষায়িত পণ্যও পরিবহন করি। আমরা গড়-পড়তা পণ্য পরিবহন না করে যেখানে ‘কনট্রিবিউশন মার্জিন’ বেশি সেখানেই আমাদের আগ্রহ বেশি। সেখানে আমরা খুব ভালো করছি।’
আর ফিডার অপারেটর ফিডারটেকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাহেদ সারোয়ার বলছেন, মায়ের্সক লাইন নিজেদের জাহাজ এবং কন্টেইনার লাইন দিয়ে বিশ্বজুড়েই একটি বিশাল নেটওয়ার্ক-কানেকটিভিটি তৈরী করেছে। তাদের বিজনেস ভলিউম এত বড় অনেকগুলো ছোট লাইন নিজেদের মধ্যে মার্জ বা একীভূত হয়ে গেছে। এজন্য ছোট ছোট লাইন মিলে বড় অ্যালায়েন্স তৈরী করে শিপিং বাণিজ্যে টিকে থাকার চেষ্টা করছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে সরাসরি বড় জাহাজ বা মাদার ভ্যাসেল ভিড়তে পারে না। সর্বোচ্চ সাড়ে নয়মিটার গভীরতার জাহাজ দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও চীনের বন্দরগুলোতে নেয়া হয়। সেখান থেকে বড় জাহাজে করে বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে পৌঁছে যায়। এই কাজটি করে থাকে বিদেশি জাহাজের ফিডার অপারেটর।