বাংলা নিউজ

একদিন আগেই জেটিতে ২শ মিটার দীর্ঘ ‌‌’কমন এটলাস’ জাহাজ

সোমবার চট্টগ্রাম বন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বােধন হচ্ছে ২শ মিটার দীর্ঘ জাহাজ ভিড়ানোর কার্যক্রম। ‘কমন এটলাস’ নামের জাহাজটি খোলা পণ্যবাহি, এসেছে অপরিশোধিত চিনি নিয়ে ব্রাজিল থেকে। বড় জাহাজ ভিড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার পর মন্ত্রীর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের দিন খুঁজছিল চট্টগ্রাম বন্দর।
নৌ প্রতিমন্ত্রীর সময় পেলে জাহাজ পায়া যাচ্ছিল না তাৎক্ষনিক। পরে মেঘনা গ্রুপের জন্য অপরিশোধিত চিনি নিয়ে আগে থেকেই বহির্নোঙরে থাকা জাহাজ ‘কমন এটলাস’র খোঁজ মিলে। পরে তা’ৎক্ষনিক সেই জাহাজকেই প্রথম জেটিতে ভিড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বন্দরের মেরিন বিভাগ। বন্দরেরর ইতিহাসে এতবড় জাহাজ ভিড়ানোর ঘটনা এই প্রথম। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যায় জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি জেটিতে ভিড়েছে। রাতের মধ্যেই জেটিতে থাকবে; সকালে আনুষ্ঠানিকতা চলবে শুধু।

বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, বড় জাহাজ ভিড়ানোর ফলে পণ্য আমদানিতে ব্যয় অনেক কমবে। এর মাধ্যমে একটি জাহাজে আগের চেয়ে ২০-২৫ শতাংশ বাড়তি পণ্য পরিবহন সম্ভব হবে।
শীপ হ্যান্ডলিং অপারেটর জেএসি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিমুল মজুমদার বলেন, এই উদ্যোগ অনেক আগেই এই উদ্যোগ নিলে সুফল আমরা বেশি ভোগ করতাম।বড় জাহাজ ভিড়ানোর উদ্যোগ মাইলফলক হয়ে থাকবে। এরমাধ্যমে বহির্নোঙরে আসা অনেক জাহাজকেই লাইটারিং করতে হবে না। পণ্যবাহি জাহাজ সরাসরি জেটিতে ভিড়তে পারবে। আমদানিকারক সরাসরি বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে পারবেন। এখনকার মতো বহির্নোঙরে পন্য লাইটারিং বা স্থানান্তর করা কমে যাবে। সময় অর্থ সাশ্রয় হবে, পণ্যের অপচয় অনেক কম হবে।

বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যমান জেটি, যন্ত্রপাতি, জনবল দিয়ে শুধুমাত্র বড় জাহাজ ভিড়িয়ে বছরে ৫-৭ লাখ একক বাড়তি কন্টেইনার উঠানামা করা সম্ভব।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম. শাহজাহান বলেন, এখন বন্দরে একটি জাহাজে সর্বোচ্চ ২৫শ একক কন্টেইনার পরিবহন করতে পারছে ফিডার জাহাজগুলো। ২শ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ আসলে ৩ হাজার থেকে ৩২শ একক কন্টেইনার আনতে পারবে। ফলে ২৫ শতাংশ বাড়তি পণ্য পরিবহন সম্ভব শুধু বড় জাহাজ ভিড়ানোর মাধ্যমে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরে ১৯৭৫ সালে দৈর্ঘ্যে ১৬০ মিটার ও ৭ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারত। পরবর্তী সময়ে ১৯৮০ সালে ১৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৮ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট, ১৯৯০ সালে ১৮০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৮ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট, ১৯৯৫ সালে ১৮৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক ২ মিটার ড্রাফট এবং সবশেষ ২০১৪ সালে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। আজ সোমবার তা বেড়ে জাহাজের দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার এবং ড্রাফট ১০ মিটারে উন্নীত করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার এম আরিফুর রহমান বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর চ্যানেল ও উভয় পাড় নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান এইচআর ওয়ালিংফোর্ড গবেষণা করে। তাদের গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধার মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে এখনই ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে। তাই আমরা এই দৈর্ঘ্য ও ড্রাফটের জাহাজ ভেড়াচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ড্রেজিং ব্যবস্থায় আরও কিছু উন্নতি করা গেলে আগামীতে পর্যায়ক্রমে সর্বোচ্চ ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১১ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে এই বন্দরের জেটিতে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button