আগামীর বন্দর বে টার্মিনাল নির্মানে অগ্রগতি নেই

বিশেষ প্রতিনিধি
আগামীর বন্দর হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ‘বে টার্মিনাল’ নির্মান প্রকল্পে কোন অগ্রগতি নেই। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে মিল রেখে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে পতেঙ্গা সাগর উপকূলজুড়ে ‘বে টার্মিনাল’ গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। নানা জটিলতা পেরিয়ে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বে-টার্মিনাল নির্মাণ কল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দুই বছরেও কিছুই আগায়নি।
বে টার্মিনাল নির্মান ও পরিচালনা করবে বিশ্বের শীর্ষ বন্দর অপারেটর প্রতিষ্ঠান। সেই নির্মানকাজ শুরুর আগে প্রথম পর্যায়ে ৬৮ একর জমিতে কন্টেইনার ইয়ার্ড এবং ট্রাক টার্মিনাল বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত ছিল। চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান মুল জেটিতে জাহাজ থেকে পণ্য নামিয়ে পণ্যগুলো স্থানান্তর করে বে টার্মিনাল ইয়ার্ডে নেয়া হবে। আর সেখান থেকে ডেলিভারি নিবেন আমদানিকারকরা। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের ভিতর পণ্য রাখার স্থান বাড়বে এবং বন্দরের সক্ষমতাও বাড়বে। বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে সেই ইয়ার্ড চালুর লক্ষ ছিল। সেই কাজ এখন পর্যন্ত শুরুই হয়নি। কবে নাগাদ শুরু হবে তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।
বে টার্মিনাল প্রকল্প ১০ বছর ধরেও বাস্তবায়ন না হওয়ার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সী কম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক। তিনি বলছেন, বে টার্মিনাল নাম আসলেই কেন দীর্ঘসূত্রিতা তৈরী হয় তা আমার বোধগম্য নয়। এর অর্ন্তনিহিত কোন কারণ আছে তা অবশ্যই খুঁেজ দেখা দরকার।
এফবিসিসিআই সাবেক এই পরিচালক বলছেন, ২০১০ সাল থেকেই বে টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত কর্তৃপক্ষ শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের সদিচ্ছা আছে কিনা আমি সন্দিহান। বিগত ১০ বছরে আমরা যদি একটু একটু করে ইয়ার্ডও নির্মান করে ফেলতে পারতাম তাহলে আজ সেটি অনেক কাজ দিতো। এখন বন্দরের ভিতর ছোট্ট একটি স্থানের জন্য জট লেগে যাচ্ছে। ইয়ার্ড থাকলে আমরা সেই সুবিধা কাজে লাগাতে পারতাম। বন্দরের বিগত নেতৃত্ব অবশ্যই এই প্রকল্প দীর্ঘায়িত করার জন্য দায়ী।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, দেশের অর্থনীতি যে গতিতে আগাচ্ছে তাতে চট্টগ্রাম বন্দরের বিকল্প হিসেবে বে টার্মিনালের সবচে বড় বৈশিষ্ট হচ্ছে, এখানে জোয়ার-ভাটার নির্ভরতা ছাড়াই সরাসরি জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারবে। আর চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়েও ৯ মিটার বড় গভীরতার জাহাজ অনায়াসেই ভিড়ানো যাবে। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেআগামীর বন্দর বে টার্মিনাল নির্মানে অগ্রগতি নেই বড় মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি হয়। ধাপে ধাপে এই প্রকল্প বাস্তবায়নেরও সিদ্ধান্ত হয়। শুধু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ে এভাবেই সবচেআগামীর বন্দর বে টার্মিনাল নির্মানে অগ্রগতি নেই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরী হয়েছে।
যদিও চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ বলছেন, এই প্রকল্পে নতুন করে ডিটেইল ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগ চলছে; যেখানে আর্থিক ব্যয়ের বিষয়টিও যুক্ত থাকবে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দিবে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই আমরা বন্দরের নিজস্ব তহবিল থেকেই ট্রাক টার্মিনাল এবং কন্টেইনার রাখার ইয়ার্ড নির্মান করবো। ফলে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল চালুর পর সক্ষমতা শেষ হওয়ার আগেই আমরা এই টার্মিনাল ও ইয়ার্ড পেয়ে যাবো।
বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে সর্বোচ্চ ১৮শ একক ধারনক্ষমতার কন্টেইনার জাহাজ ঢুকতে পারে; আর বে টার্মিনালে একসাথে ৫ হাজার একক কন্টেইনার ধারনক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারবে। এখন বন্দরে জোয়ার-ভাটার ওপর ভিত্তি করে জাহাজগুলো জেটিতে ভিড়ে; আর একেবারে সাগরে অবস্থানের কারণে বে টার্মিনালে দিনে-রাতে জাহাজ জেটিতে ভিড়তে এবং ছেড়ে যেতে পারবে। এতে পণ্য পরিবহন খরচ ও প্রচুর সময় সাশ্রয় হবে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর জেটি-টার্মিনালে একসাথে ১৯টি জাহাজ ভিড়তে পারে আর বে টার্মিনালে একসাথে ৩০-৩৫টি জাহাজ ভিড়তে পারবে। কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলে বাঁকের কারণে জেটিতে জাহাজ আসাকে যথেষ্ট ঝূঁকি নিতে হয়। এর বিপরিতে বে টার্মিনালে সরাসরি জাহাজ ভিড়তে পারবে।
শুধু তাই নয়, বহির্নোঙর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে পৌঁছতে একটি জাহাজকে ১৫ কিলোমিটার দুরত্ব পাড়ি দিতে হয় এর বিপরিতে বে টার্মিনাল জেটিতে ভিড়তে লাগবে মাত্র এক কিলোমিটার। এছাড়াও বে টার্মিনালে পণ্য জাহাজ থেকে নামিয়ে সরাসরি চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে চলে যেতে পারবে।