চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজট নেই; অথচ সেই অজুহাতে ইউরোপ-চট্টগ্রাম রুটে সার্ভিস বন্ধ করলো কসকো শিপিং. কড়া প্রতিবাদ বন্দরের

বিশেষ প্রতিনিধি,
চট্টগ্রাম বন্দরে ‘সিরিয়াস কনজেশন’ বা ব্যাপক জাহাজজটের অজুহাত দেখিয়ে ইউরোপ-চট্টগ্রাম রুটে কন্টেইনারে পণ্য পরিবহন বন্ধ করেছে কসকাে শিপিং লাইনস। চট্টগ্রাম বন্দরে এই মুহুর্তে কোন জাহাজজট নেই; কন্টেইনারজট নেই। বহির্নোঙর থেকে দুই থেকে তিন দিন অপেক্ষার পর স্বাভাবিক নিয়মেই জাহাজ জেটিতে ভিড়ছে।
কিন্তু বিশ্বের শীর্ষ একটি শিপিং কম্পানির এমন উদ্ভট মনগড়া অজুহাত দেশি-বিদেশি শিপিং লাইনগুলোর মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। কৌশলে নেতিবাচক প্রচারণা হিসেবে অনেকেই অভিহিত করছেন। আর চট্টগ্রাম বন্দর বলছে এটি ষড়যন্ত্র।
জানা গেছে, গত ২১ ডিসেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে জাহাজ চলাচল সাসপেন্ডের কারণ হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজটের এই কারণ দেখিয়েছে কম্পানিটি। আদেশটি দেয়া হয়েছে কসকো শিপিংয়ের ইউরোপীয় শাখা থেকে। বিজ্ঞপ্তিতে একইসাথে বলেছে, এরফলে জেটিতে ভিড়তে জাহাজ দেরি হচ্ছে এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে এড়িয়ে যেতে হচ্ছে জাহাজকে। এই কারণে চট্টগ্রাম-ইউরোপ রুটে নতুন করে কোন বুকিং নিচ্ছে না শিপিং কম্পানিটি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম শিপিং এক্সপ্রেসকে বলছেন, এটা টোটালি ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারনা; ইউরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য প্রসারের ইমেজকে ক্ষুন্ন করার অপপ্রয়াস।
তিনি বলছেন, গত চার বছরের ইতিহাসে চট্টগ্রাম বন্দরে এখন ‘সর্বনিম্ন বার্থিং ডিলে’ চলছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জেটিতে জাহাজ বার্থিং এখন এক দিনের কম। শুধু তাই ই নয়; গত চারমাস ধরে বহির্নোঙরে এসে কন্টেইনার জাহাজগুলো জেটি ’অন এরাইভাল বার্থিং’ নিচ্ছে। এই সময়ে এমন প্রচারনা বন্দরের অগ্রগতিকেই কৌশলে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করলো।
শিপিং লাইনগুলো বলছে, গত কয়েকমাস ধরে ট্রানশিপমেন্ট বন্দর; বিশেষ করে শ্রীলংকার কলম্বো এবং সিঙ্গাপুর বন্দরে ব্যাপক জাহাজজটের কারণে জাহাজগুলো পণ্য নিয়ে বহির্নোঙরে থেকে ৫দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিল। এরপর জেটিতে ভিড়তে পেরেছিল। জাহাজজট এড়াতে অনেক শিপিং লাইন এই দুটি বন্দর এড়িয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় পণ্য পরিবহন করছিল। বাংলাদেশসহ বিপুল দেশের পণ্য দুই বন্দরে আটকা পড়েছিল। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। কিন্তু বহির্নোঙরে পৌঁছে একটি কন্টেইনার জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ভিড়ছিল বেশ কমাস ধরেই।
একটি বিদেশি শিপিং লাইনের শীর্ষ কর্মকর্তা শিপিং এক্সপ্রেসকে বলছেন, সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরের জাহাজজটকে তারা চট্টগ্রাম বন্দরের পর দোষ চাপিয়ে গ্রাহকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে তো এই মুহুর্তে কোন জাহাজজট নেই। এই বিজ্ঞপ্তি ভুল হলে তো ইতোমধ্যে সংশোধন করতো!
জানতে চাইলে কসকাে শিপিং লাইনসের বাংলাদেশি এজেন্ট কন্টিনেন্টাল শিপিংয়ের সাথে যোগাযোগ করলে তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে না প্রকাশ না করে এক কর্মকর্তা বলছেন, এটা একটা মিসটেক। বিজ্ঞপ্তিটি দেয়া হয়েছে ইউরোপ থেকে।